HRA Hike: টিয়ার-২ শহরের সরকারি কর্মচারীরা বেতন কমিশনে বিশেষ এইচআরএ বৃদ্ধির দাবি কেন জানাচ্ছেন?

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে, বিশেষ করে টিয়ার-২ শহরে কর্মরতদের মধ্যে, ৮ম বেতন কমিশনে (8th Pay Commission) হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (HRA Hike) সংশোধন নিয়ে উৎসাহ ও…

Why Government Employees in Tier-2 Cities Demand Special HRA Hike in 8th Pay Commission

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে, বিশেষ করে টিয়ার-২ শহরে কর্মরতদের মধ্যে, ৮ম বেতন কমিশনে (8th Pay Commission) হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (HRA Hike) সংশোধন নিয়ে উৎসাহ ও প্রত্যাশা তুঙ্গে। আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য বেতন ও ভাতার সংশোধনের সুপারিশ করবে। তবে, টিয়ার-২ শহরে (ওয়াই ক্লাস শহর) কর্মরত কর্মচারীরা বিশেষ এইচআরএ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন, কারণ জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং এই শহরগুলিতে আবাসনের বাজার মূল্য তাদের আর্থিক চাপে ফেলছে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করব কেন টিয়ার-২ শহরের কর্মচারীরা এই দাবি তুলছেন এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে।

এইচআরএ এবং টিয়ার-২ শহরের প্রেক্ষাপট
হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (এইচআরএ) হলো কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাদের ভাড়া বাড়িতে থাকার ব্যয় মেটাতে সহায়তা করে। ৭ম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, শহরের শ্রেণিবিভাগের উপর ভিত্তি করে এইচআরএ নির্ধারিত হয়। এক্স ক্লাস শহর (জনসংখ্যা ৫০ লক্ষের বেশি, যেমন দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই) কর্মচারীরা মূল বেতনের ২৪% এইচআরএ পান, ওয়াই ক্লাস শহর (জনসংখ্যা ৫ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ, যেমন পুনে, আহমেদাবাদ, লখনউ) কর্মচারীরা ১৬% এবং জেড ক্লাস শহর (জনসংখ্যা ৫ লক্ষের কম) কর্মচারীরা ৮% এইচআরএ পান। যখন ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স (ডিএ) ৫০% ছাড়িয়ে যায়, তখন এই হার যথাক্রমে ৩০%, ২০% এবং ১০%-এ উন্নীত হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিএ ৫০% হওয়ায়, ওয়াই ক্লাস শহরের কর্মচারীরা বর্তমানে ২০% এইচআরএ পাচ্ছেন।

   

তবে, টিয়ার-২ শহরে (ওয়াই ক্লাস) বসবাসকারী কর্মচারীরা মনে করেন যে এই হার তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, পুনে, লখনউ, জয়পুর, বা হায়দ্রাবাদের মতো শহরগুলিতে আবাসনের বাজার মূল্য গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই শহরগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ, এবং বাণিজ্যিক উন্নয়নের কারণে ভাড়ার হার মেট্রো শহরগুলির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। একজন কর্মচারী, যার মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা, ওয়াই ক্লাস শহরে ২০% এইচআরএ হিসেবে ৭,০০০ টাকা পান, যা প্রায়শই ভাড়ার বাজার মূল্যের তুলনায় অপর্যাপ্ত। উদাহরণস্বরূপ, পুনেতে একটি দুই কক্ষের ফ্ল্যাটের গড় ভাড়া ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা, যা এইচআরএ-র তুলনায় অনেক বেশি।

বিশেষ এইচআরএ বৃদ্ধির দাবি
টিয়ার-২ শহরের কর্মচারীরা বিশেষ এইচআরএ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন কারণ এই শহরগুলিতে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং আবাসনের খরচ মেট্রো শহরের কাছাকাছি চলে এসেছে, কিন্তু এইচআরএ-র হার এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ন্যাশনাল কাউন্সিল-জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেকানিজম (এনসি-জেসিএম)-এর সদস্যরা এই বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে ওয়াই ক্লাস শহরের এইচআরএ হার এক্স ক্লাস শহরের কাছাকাছি করা হোক। তাদের যুক্তি, টিয়ার-২ শহরে আবাসনের ব্যয় এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার খরচ, যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা, এবং যাতায়াত, দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু বর্তমান এইচআরএ এই ব্যয় মেটাতে অপর্যাপ্ত।

এছাড়াও, টিয়ার-২ শহরে কর্মরত কর্মচারীরা মনে করেন যে ৭ম বেতন কমিশনের শ্রেণিবিভাগ (এক্স, ওয়াই, জেড) এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। উদাহরণস্বরূপ, আহমেদাবাদ বা হায়দ্রাবাদের মতো শহরগুলি বাণিজ্যিক ও শিল্প কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, এবং এই শহরগুলির আবাসন বাজার মূল্য মেট্রো শহরের সমতুল্য। তাই, তারা দাবি করছেন যে ৮ম বেতন কমিশন নতুন করে শহরের শ্রেণিবিভাগ পর্যালোচনা করুক এবং ওয়াই ক্লাস শহরের এইচআরএ হার ২০% থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২৫-২৮% করা হোক।

Advertisements

মুদ্রাস্ফীতি এবং এইচআরএ-র সম্পর্ক
৮ম বেতন কমিশন মুদ্রাস্ফীতি-ভিত্তিক বেতন সংশোধনের উপর গুরুত্ব দেবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং এইচআরএ এই সংশোধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে। গত কয়েক বছরে ভারতের মুদ্রাস্ফীতির হার ৫-৭% এর মধ্যে ওঠানামা করেছে, এবং খাদ্য, জ্বালানি, এবং আবাসনের মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়েছে। টিয়ার-২ শহরে এই প্রভাব আরও স্পষ্ট, কারণ এই শহরগুলিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নগরায়ণের কারণে ভাড়ার হার দ্রুত বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮ম বেতন কমিশন ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে, যা বেতন বৃদ্ধির হার ৩০-৩৪% পর্যন্ত হতে পারে। এই বৃদ্ধি এইচআরএ-র হারেও প্রতিফলিত হবে।

সম্ভাব্য প্রভাব
টিয়ার-২ শহরের কর্মচারীদের জন্য বিশেষ এইচআরএ বৃদ্ধি হলে তাদের আর্থিক চাপ কমবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ওয়াই ক্লাস শহরের এইচআরএ ২০% থেকে ২৫% বাড়ানো হয়, তবে ৩৫,০০০ টাকা মূল বেতনের একজন কর্মচারী ৭,০০০ টাকার পরিবর্তে ৮,৭৫০ টাকা এইচআরএ পাবেন, যা তাদের ভাড়ার ব্যয় মেটাতে সহায়ক হবে। এছাড়াও, এই বৃদ্ধি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট এবং খুচরা খাতে, চাহিদা বাড়াতে পারে।

তবে, এই দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, এইচআরএ বৃদ্ধি কেন্দ্রীয় সরকারের উপর অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা চাপাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮ম বেতন কমিশনের বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১.৮ লক্ষ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত, শহরের শ্রেণিবিভাগ পুনরায় পর্যালোচনা করা এবং নতুন এইচআরএ হার নির্ধারণ করা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তৃতীয়ত, কর্মচারী সংগঠন এবং সরকারের মধ্যে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এবং এইচআরএ হার নিয়ে দর কষাকষি হতে পারে।

টিয়ার-২ শহরের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৮ম বেতন কমিশনে বিশেষ এইচআরএ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন, কারণ এই শহরগুলিতে আবাসনের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার খরচ মেট্রো শহরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই দাবি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি কর্মচারীদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। তবে, এইচআরএ সংশোধনের জন্য শহরের শ্রেণিবিভাগ পুনরায় পর্যালোচনা এবং সরকারের আর্থিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে। ৮ম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ এবং সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নজর রাখছেন সকল কর্মচারী। এই কমিশন শুধু বেতন বৃদ্ধিই নয়, টিয়ার-২ শহরে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য ন্যায়সঙ্গত আবাসন ভাতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।