ভারতের অর্থনীতিতে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, এবং এই খাতে মহিলারা ক্রমশ উদ্যোক্তা (Agri Business)হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। গ্রামীণ মহিলাদের আয় বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্বাধীনতার জন্য কৃষি-ভিত্তিক ব্যবসা একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য কৃষি খাতে ব্যবসার সুযোগ শুধুমাত্র আর্থিক লাভই নয়, বরং সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জৈব কৃষি
জৈব কৃষি বর্তমানে ভারতে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কারণ ভোক্তারা রাসায়নিক-মুক্ত খাদ্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। মহিলা উদ্যোক্তারা জৈব শাকসবজি, ফলমূল, শস্য এবং মশলা উৎপাদনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসায় প্রাথমিক বিনিয়োগ কম, এবং গ্রামীণ এলাকায় জমির প্রাপ্যতা এটিকে আরও সহজ করে।
মহিলারা তাদের নিজস্ব জমিতে জৈব কম্পোস্ট তৈরি করে এবং স্থানীয় বাজার, সুপারমার্কেট বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রি করতে পারেন। সরকারের জৈব কৃষি প্রকল্প এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এই ক্ষেত্রে মহিলাদের সহায়তা করছে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে ‘পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা’ (পিকেবিওয়াই) মহিলাদের জৈব কৃষির জন্য ভর্তুকি এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।
মাশরুম চাষ
মাশরুম চাষ একটি লাভজনক এবং কম জায়গায় করা যায় এমন ব্যবসা, যা গ্রামীণ মহিলাদের জন্য আদর্শ। এটি কম পুঁজি এবং স্বল্প সময়ে উচ্চ মুনাফা প্রদান করে। ওয়েস্টার এবং বাটন মাশরুমের চাহিদা বাজারে প্রচুর, বিশেষ করে রেস্তোরাঁ এবং হোটেলে।
মহিলারা ছোট ঘরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে মাশরুম চাষ শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসায় প্রশিক্ষণের জন্য কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (কেভিকে) এবং এনজিও-র মতো সংস্থাগুলি সহায়তা প্রদান করে। মাশরুম চাষে প্রতি মাসে ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব, যা গ্রামীণ মহিলাদের জন্য একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস হতে পারে।
পোলট্রি ও মৎস্য চাষ
পোলট্রি এবং মৎস্য চাষ গ্রামীণ মহিলাদের জন্য একটি জনপ্রিয় ব্যবসার বিকল্প। মুরগি পালন, বিশেষ করে দেশি মুরগি এবং ডিম উৎপাদন, কম খরচে শুরু করা যায় এবং এটির বাজার চাহিদা সারা বছর থাকে। একইভাবে, মৎস্য চাষ, যেমন কাতলা, রুই এবং তেলাপিয়া মাছের চাষ, গ্রামীণ এলাকায় পুকুর বা ছোট জলাশয়ে করা সম্ভব। মহিলারা সরকারের প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার মাধ্যমে ভর্তুকি এবং ঋণ পেতে পারেন। এই ব্যবসাগুলি স্থানীয় বাজারে এবং রপ্তানির জন্য উচ্চ লাভের সম্ভাবনা রাখে।
ফুলের চাষ
ফুলের চাষ, বিশেষ করে গাঁদা, রজনীগন্ধা এবং গোলাপের চাষ, মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা। ফুলের চাহিদা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ে এবং সজ্জার জন্য সারা বছর থাকে। গ্রামীণ মহিলারা ছোট জমিতে বা বাড়ির উঠোনে ফুলের চাষ শুরু করতে পারেন।
এই ব্যবসায় সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রশিক্ষণ এবং বাজার সংযোগ প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা পূর্ব মেদিনীপুর এবং হাওড়ায় ফুলের চাষে সফল হয়েছেন, যা তাঁদের মাসিক ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা আয় এনে দিচ্ছে।
বিএফআই নির্বাচনে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুরাগ ঠাকুর
মধু চাষ
মধু চাষ বা মৌমাছি পালন একটি কম খরচের এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবসা। মহিলারা ছোট পরিসরে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করে মধু উৎপাদন করতে পারেন। মধুর চাহিদা খাদ্য শিল্প, ওষুধ শিল্প এবং স্থানীয় বাজারে প্রচুর। এই ব্যবসায় প্রাথমিক বিনিয়োগ কম এবং সরকারের জাতীয় মৌমাছি পালন ও মধু মিশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ এবং ভর্তুকি পাওয়া যায়।
মধু চাষ শুধুমাত্র আয়ের উৎসই নয়, বরং ফসলের পরাগায়নে সহায়ক হয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে।গ্রামীণ মহিলাদের জন্য সুযোগএই ব্যবসাগুলি গ্রামীণ মহিলাদের জন্য আর্থিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক ক্ষমতায়নের পথ খুলে দেয়। সরকারের প্রকল্প যেমন মুদ্রা ঋণ, মহিলা উদ্যোক্তা প্রকল্প এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ মহিলাদের এই ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করে।
এছাড়া, স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী (এসএইচজি) এবং এনজিও মহিলাদের বাজার সংযোগ এবং বিপণনের সুযোগ প্রদান করে। মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য কৃষি খাতে ব্যবসার সুযোগ শুধুমাত্র আর্থিক লাভই নয়, বরং গ্রামীণ মহিলাদের আত্মনির্ভরতা এবং সমাজে তাঁদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
জৈব কৃষি, মাশরুম চাষ, পোলট্রি, ফুলের চাষ এবং মধু চাষের মতো ব্যবসাগুলি কম বিনিয়োগে উচ্চ লাভের সম্ভাবনা রাখে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলারা এই খাতে নেতৃত্ব দিতে পারেন, যা ভারতের অর্থনীতি এবং সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।