বিধানসভা ভোটের আগে বড়সড় রদবদলের পথে বঙ্গ বিজেপি, বদল হতে পারে ৭ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পশ্চিমবঙ্গের সাংগঠনিক জেলা স্তরে বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটতে চলেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা যাচ্ছে, অন্তত সাতটি সাংগঠনিক জেলার…

Bengal BJP strategy

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পশ্চিমবঙ্গের সাংগঠনিক জেলা স্তরে বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটতে চলেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা যাচ্ছে, অন্তত সাতটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতির (District President) পরিবর্তন হতে চলেছে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কারণ সংশ্লিষ্ট সভাপতিদের কাজকর্মে চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় বিজেপি ও আরএসএস।

বিজেপি সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই সাত জন জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কাছে। অভিযোগগুলির মধ্যে রয়েছে দলীয় কর্মীদের উপেক্ষা, গোষ্ঠীকোন্দল উসকে দেওয়া, স্বজনপোষণ, এবং তৃণমূল ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগের মতো গুরুতর অভিযোগ। এমনকি দক্ষিণ কলকাতা ও হুগলি জেলার সভাপতিদের নাম ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে পোস্টার পড়েছে জেলা সভাপতিদের বিরুদ্ধে। এতে স্পষ্ট যে, নিচু স্তরে দলের ক্ষোভ ও অসন্তোষ ক্রমশ প্রকাশ্যে চলে আসছে।

   

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারংবার গোষ্ঠীকোন্দল দূর করে সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য নেতৃত্বকে। সেই সূত্র ধরেই এবারে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি। ১৫ অগাস্টের মধ্যে রাজ্যের ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দল সূত্রে খবর, প্রথমে জেলা কমিটি এবং পরে রাজ্য কমিটি গঠন হবে। ইতিমধ্যেই ৩৯টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতির নাম ঘোষণা হয়ে গেছে, তবে বাকি চারটি এবং পূর্বঘোষিত কিছু জেলায় সভাপতি বদলের সম্ভাবনা জোরাল হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, আরএসএস ঘনিষ্ঠদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে নতুন জেলা কমিটি গঠনের পরিকল্পনা চলছে। তবে এইবার শুধুমাত্র সংঘ-ঘনিষ্ঠ হলেই চলবে না। যেসব কর্মী দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন এবং মাটির স্তরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন, তাঁরাই অগ্রাধিকার পাবেন জেলা ও মণ্ডল স্তরের দায়িত্বে।

Advertisements

দলের অভ্যন্তর থেকে অভিযোগ উঠেছে, পূর্ববর্তী জেলা সভাপতিরা নিজেদের ঘনিষ্ঠদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন এবং প্রকৃত কর্মীরা অবহেলিত হয়েছেন। সেই কারণে দলের ভিতরে হতাশা তৈরি হয়েছে এবং ফলত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ, দক্ষ এবং নিষ্কলঙ্ক ভাবমূর্তির নেতৃত্ব বেছে নিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে চাইছে বিজেপি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপির এই সাংগঠনিক রদবদল ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখেই। গত ২০২১ সালের ভোটে বিজেপি রাজ্যে প্রত্যাশিত ফল করতে না পারলেও, এবার তৃণমূলকে টক্কর দিতে আগেভাগে প্রস্তুতি শুরু করেছে তারা। এবং সেই প্রস্তুতিরই অঙ্গ হিসেবে সংগঠন ঢেলে সাজানোর পথে বিজেপি নেতৃত্ব।

এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিচু স্তরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং কর্মীভিত্তির দুর্বলতা কাটিয়ে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে উঠে আসা। তাই জেলা সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশ্বস্ত, দক্ষ ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব আনার উপরেই এখন নজর গেরুয়া শিবিরের।