লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যসচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee Resign)। আর সেই ইস্তফার জেরে ফের প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের অন্দরমহলের টানাপড়েন। কল্যাণ ইস্তফা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনে কথা বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সদ্য লোকসভায় দলের দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া অভিষেক, কল্যাণকে আরও কয়েকদিন মুখ্যসচেতকের দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় দলের নতুন দলনেতা হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেন প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ নয়, বরং বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছেন, অভিষেক তাঁকে ফোন করে ৭ আগস্ট দিল্লিতে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে সব কথা শুনবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও ততক্ষণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন কল্যাণ। তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘‘মমতাদি বলেছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিকমতো হচ্ছে না। তাহলে আঙুল তো আমার দিকেই উঠছে। সেই কারণেই ইস্তফা দিয়েছি।’’
শুধু তাই নয়, কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে দলের তরফে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া নিয়েও স্পষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। কল্যাণ বলেন, ‘‘যাঁরা আমাকে গালাগাল দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল কোনও পদক্ষেপ করে না। বরং আমাকেই দোষী করা হচ্ছে।’’
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মনোভাবই যে তাঁর ইস্তফার মূল কারণ, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রবীণ এই আইনজীবী সাংসদ। কল্যাণ আরও বলেন, ‘‘দিদি বলছেন আমি ঝগড়া করি। কিন্তু যাঁরা আমাকে প্রকাশ্যে অপমান করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু হবে না? আমি পার্টিকে জানিয়েছি, আমি এই অবস্থায় কাজ করতে পারছি না।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে জল্পনা চললেও, কল্যাণ জানিয়েছেন, “ও বলেছে, কয়েকদিনের জন্য কাজ চালিয়ে নিতে। ও আসছে ৭ তারিখ, তখন সব বলব।”
এই ঘটনায় লোকসভায় তৃণমূলের শৃঙ্খলা ও নেতৃত্ব নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বকে সামনে রেখে ভবিষ্যতের দল সাজানোর ইঙ্গিত মিলছে, অন্যদিকে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষের আবহ ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত কল্যাণের ইস্তফা প্রসঙ্গে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিষেক নিজেই হস্তক্ষেপ করছেন।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ পরবর্তী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কল্যাণের মতো নেতা যদি প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে পদত্যাগ করেন, তাহলে দলের ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে নেতৃত্বকে আরও কৌশলী হতে হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।