লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্বল রেবান্না, যিনি একসময় সংসদে নীতিনির্ধারণী বিতর্কে সরব ছিলেন, আজ বন্দি জীবনের কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি। বেঙ্গালুরুর পরাপ্পানা আগ্রহারা সেন্ট্রাল জেলে এখন তিনি ‘কয়েদি নম্বর ১৫৫২৮’। সংসদের সদস্য হিসেবে ১.২ লক্ষ টাকা মূল বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়া প্রজ্বল এখন মাসে সর্বোচ্চ ৫৪০ টাকার মজুরিতে জীবিকা নির্বাহ করবেন-যদি তিনি জেলে শ্রমে যুক্ত হন (Prajwal Revanna jail life)।
জেল সূত্রে খবর, এখনো পর্যন্ত তাঁর জন্য কোনও কাজ বরাদ্দ করা হয়নি। সোমবারের মধ্যে তাঁকে জানাতে হবে, তিনি কী ধরনের কাজ করতে চান। অধিকাংশ নতুন দোষীদেরই শুরুতে বেকারি বা সেলাই ইউনিটে সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সপ্তাহে ছয় দিন, আট ঘণ্টার কাজের বিনিময়ে কয়েদিরা এই মজুরি পান।
বন্দিজীবনের নিয়মকানুন
প্রতিদিন সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বন্দিদের দিন শুরু হয়। এরপর নির্দিষ্ট মেনু অনুযায়ী দেওয়া হয় সকালের খাবার—রবিবার ভেজ পুলাও, সোমবার টমেটো ভাত, মঙ্গলবার চিত্রান্না, বুধবার পোহা, বৃহস্পতিবার পুলিয়োগারে, শুক্রবার উপমা, এবং শনিবার ভাঙ্গি ভাত। দুপুর ও রাতের খাবারে থাকে রুটি, রাগি বল, সাম্বার, ভাত ও ছাচ। সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে মেলে ডিম, বা চিকেন৷ ডিম মঙ্গলবার, মটন প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় শুক্রবার, এবং চিকেন দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবারে। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের মধ্যেই সকলকে তাঁদের ব্যারাকে ফিরে যেতে হয়।
প্রতিসপ্তাহে দুইবার, দশ মিনিট করে ফোন করার অনুমতি পান বন্দিরা। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সামনাসামনি সাক্ষাতের সুযোগও থাকে, তবে সীমিত।
ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন
জনতা দল (সেক্যুলার)-এর সাময়িকভাবে বরখাস্ত নেতা প্রজ্বল রেবান্নাকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের চারটি মামলার একটিতে দোষী সাব্যস্ত করে বেঙ্গালুরুর জন প্রতিনিধি আদালত। রায় ঘোষণার সময় নিজের রাজনৈতিক ‘দ্রুত উত্থান’-কে ‘ভুল’ বলে দাবি করে ক্ষমা চাইলেও আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
অভিযোগ, ২০২১ সালে হাসান জেলার হোলেনারাসিপুরার গন্নিকাডা ফার্মহাউসে কর্মরত এক গৃহকর্মীকে দুইবার ধর্ষণ করেন রেবান্না এবং সেই ভিডিও তিনি নিজের ফোনে ধারণ করেন। ২০২৪ সালে সামাজিক মাধ্যমে ২,০০০-এর বেশি অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর একাধিক নারী নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এই মামলার প্রেক্ষিতেই রেবান্নার বিরুদ্ধে চারটি পৃথক মামলা রুজু হয়।
পালানো, অপহরণ, গ্রেপ্তার
এই কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর অভিযোগকারীকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে না দেওয়ার জন্য রেবান্নার বাবা-মায়ের হুকুমে তাঁকে অপহরণ করা হয় বলে তদন্তকারীদের দাবি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে তদন্তকারীরা। ঘটনার পরপরই দেশ ছেড়ে জার্মানিতে পালিয়ে যান রেবান্না। কিন্তু গত ৩১ মে ভারতে ফিরে এলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি কারাবন্দি।