কলকাতা: চলতি বছরের দ্বিতীয় সার্বিক মূল্যায়নের (সামেটিভ-২) পরীক্ষা রাজ্যের সমস্ত সরকারি এবং সরকার পোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ অগাস্ট থেকে। পরীক্ষা চলবে ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত। এই প্রথমবার, রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (West Bengal Primary Board) সরাসরি এই মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করছে এবং তা স্কুলগুলিতে পৌঁছে দেবে। রাজ্যের প্রায় ৫০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ পড়ুয়াকে নিয়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
পর্ষদ সূত্রে খবর, আগে পর্যন্ত প্রতিটি স্কুল নিজস্বভাবে সামেটিভ প্রশ্নপত্র তৈরি করত। ফলে পড়ানো অংশ, প্রশ্নের মান এবং মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্কুলভেদে বিস্তর ফারাক দেখা দিত। এই বৈষম্য কাটাতেই ২০২৫ সাল থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সামেটিভ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি করবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, “আমরা লক্ষ্য করেছি, বহু স্কুল নিজের মতো করে প্রশ্ন তৈরি করে এবং সেটি এমনভাবে তৈরি হয় যেখানে শুধু তাদের শেখানো অংশই থাকে। কিন্তু তাতে রাজ্যের সমস্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের একরকম মানদণ্ডে বিচার করা যায় না। তাই এবার থেকে পর্ষদ প্রশ্ন তৈরি করবে এবং সেটি স্কুলে পৌঁছে দেবে।”
পরীক্ষার রুটিন ইতিমধ্যেই সমস্ত স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র থাকবে দু’টি সেটে। পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও স্কুলে স্থানীয় কারণে যদি নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা না হয়, তাহলে বিকল্প দিনেই দ্বিতীয় সেটের প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে পরীক্ষা নিতে হবে।
রাজ্যে এখন থেকে বছরে তিন দফা সামেটিভ মূল্যায়ন হয়— এপ্রিলের শেষে প্রথম সামেটিভ, অগাস্টে দ্বিতীয় এবং ডিসেম্বরে তৃতীয় সামেটিভ। পর্ষদ জানায়, দ্বিতীয় সামেটিভের পরেই তৃতীয় সামেটিভের জন্য একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা হবে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পড়ুয়াদের কী কী অধ্যায় পড়ানো হবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে সেই ক্যালেন্ডারে।
শুধু তাই নয়, ২০২৬ সাল থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ক্যালেন্ডার চালু করতে চায় পর্ষদ, যেখানে প্রতি চার মাসে কোন অধ্যায় কত দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে, কোন অধ্যায়ে কী বিষয় বেশি গুরুত্ব পাবে, তা বিস্তারিতভাবে নির্দেশ থাকবে। ফলে রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ানো এবং মূল্যায়নের মধ্যে সমতা বজায় থাকবে বলে আশা শিক্ষা মহলের।
পর্ষদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, প্রশ্ন তৈরির খরচও তারাই বহন করবে। এতে স্কুলগুলির ওপর আর্থিক বোঝা বাড়বে না। এই সিদ্ধান্তে খুশি রাজ্যের শিক্ষক সংগঠনগুলিও। তাদের দাবি, এই পদক্ষেপে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশোনার মানে সমতা আসবে এবং বুনিয়াদি শিক্ষার ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
সার্বিকভাবে দেখলে, রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় একরকম রূপান্তর ঘটাতে চলেছে এই সিদ্ধান্ত। পর্ষদের এই কেন্দ্রীয় প্রশ্নপত্র এবং নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার ভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতিতে আগামী দিনে রাজ্যের প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মান উন্নত হবে বলেই মত শিক্ষা বিশারদদের।