যোগী রাজ্যে বন্যা, বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা

উত্তরপ্রদেশে অবিরাম বৃষ্টির ফলে ১৩টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে (Flood)। গঙ্গা, যমুনা এবং বেতওয়া নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে, যার ফলে বারাণসী, প্রয়াগরাজ…

Flood in UP

উত্তরপ্রদেশে অবিরাম বৃষ্টির ফলে ১৩টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে (Flood)। গঙ্গা, যমুনা এবং বেতওয়া নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে, যার ফলে বারাণসী, প্রয়াগরাজ এবং অন্যান্য শহর জলমগ্ন। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৮৪,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ১১,২৪৮ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৩৪৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজ্য প্রশাসন ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম তীব্রভাবে পরিচালনা করছে, এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ১১ সদস্যের একটি মন্ত্রী দল গঠন করেছেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করছেন।

   

বারাণসীতে বন্যা পরিস্থিতি

বারাণসীতে গঙ্গা নদীর জলস্তর সোমবার সকালে ৭২.১ মিটারে পৌঁছে গেছে, যা বিপদসীমা ৭১.২৬২ মিটারের উপরে। কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গঙ্গার জলস্তর প্রতি ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার হারে বাড়ছে। এর ফলে শহরের ৮৪টি ঘাট সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে গেছে। দশাশ্বমেধ ঘাটে বিখ্যাত গঙ্গা আরতি এখন ছাদের উপরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এবং মণিকর্ণিকা ও হরিশ্চন্দ্র ঘাটে শ্মশানক্রিয়া উঁচু প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়েছে।

বারাণসীর নিম্নাঞ্চল যেমন কোনিয়া, সালারপুর, হুকুলগঞ্জ এবং বারাণসীর উপনদী বরুণার তীরবর্তী এলাকাগুলি বন্যার জলে প্লাবিত হয়েছে। প্রশাসন নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করেছে এবং ৪৬টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করেছে, যেখানে ২,০৯৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বরুণা নদীর জলস্তর মাত্র সাত ঘণ্টায় ১২ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

প্রয়াগরাজে বন্যার তাণ্ডব

প্রয়াগরাজে গঙ্গা ও যমুনা নদীর জলস্তর বিপদসীমা ৮৪.৭৩৪ মিটার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার সকাল ৮টায় গঙ্গার জলস্তর ফাফামাউতে ৮৬.০৩ মিটার এবং যমুনার জলস্তর নৈনীতে ৮৬.০৪ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে শহরের ১০৭টি ওয়ার্ড এবং সদর তহসিলের অধীনস্থ এলাকা যেমন রাজাপুর, বেলি কচ্ছার, চাঁদপুর সালোরি, গোবিন্দপুর, ছোটা বাঘাড়া এবং বড়া বাঘাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গ্রামীণ এলাকায় ফুলপুর তহসিলের ১৮টি গ্রাম, সোরাঁওয়ের ৮টি, মেজার ১২টি, বারা তহসিলের ৮টি এবং হান্ডিয়া তহসিলের ৬টি গ্রাম বন্যার জলে ডুবে গেছে। প্রশাসন স্কুলগুলিতে শিক্ষকতার কাজ স্থগিত করেছে এবং ত্রাণ শিবির স্থাপন করেছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।

বড়ে হনুমান মন্দিরে গঙ্গার জল প্রবেশ করেছে, যা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান।অন্যান্য জেলায় পরিস্থিতিবন্যার প্রভাব কেবল বারাণসী এবং প্রয়াগরাজেই সীমাবদ্ধ নয়। মির্জাপুর, গাজীপুর, বলিয়া, জালৌন, ঔরাইয়া, কানপুর দেহাত, বান্দা, এটাওয়া, ফতেপুর, কানপুর শহর এবং চিত্রকুট সহ ১৩টি জেলায় বন্যার প্রভাব পড়েছে।

Advertisements

রিলিফ কমিশনার ভানু চন্দ্র গোস্বামীর মতে, ৩৭টি তহসিলের ৪০২টি গ্রামে ৮৪,৩৯২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৪৭,৯০৬ জন মানুষ ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন এবং ২,৭৫৯টি গবাদি পশু স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রায় ৪,০১৫ হেক্টর কৃষিজমি জলমগ্ন হয়েছে।

ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ২৪x৭ তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন। বারাণসীতে ২২টি নৌকা উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে, এবং ২,৬৭৭টি খাদ্য প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বারাণসীর স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, কিছু ত্রাণ শিবিরে খাদ্য ও নাস্তার গুণমান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, এবং প্রশাসন এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

বন্যার ফলে কৃষি, পরিকাঠামো এবং জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন বাঁধ মেরামত ও ত্রাণ বিতরণে মনোযোগ দিচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন উত্তরপ্রদেশে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

ডিএ মামলায় বড় বার্তা! প্রয়োজনে রোজ শুনানি সুপ্রিম কোর্টে

স্থানীয় বাসিন্দারা এবং প্রশাসন উভয়েই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করছে, তবে বন্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য বৃহত্তর পরিকল্পনা প্রয়োজন।এই পরিস্থিতিতে, সকলের সহযোগিতা এবং সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।