২০২৫ সালের বাজেটে নতুন কর ব্যবস্থার (Save tax ) অধীনে আয়করের রিবেট সীমা ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা দেশের লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্ত করদাতার কাছে এক বিশাল স্বস্তির বার্তা। আগের চেয়ে অনেক কম কর এবং সহজ রিটার্ন ফাইলিং-এর সুবিধা থাকায় বহু মানুষ পুরনো কর কাঠামো থেকে নতুন ব্যবস্থায় চলে আসছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন যে, এই সহজীকরণের ফলে কর পরিকল্পনা করার দরকার আর নেই। এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়।
নতুন কর ব্যবস্থায় কিছু বিশেষ ছাড়ের সুযোগ না থাকলেও (যেমন ৮০সি, ৮০ডি, HRA ইত্যাদি), সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে এখনো বেশ কিছু আইনি উপায়ে করের বোঝা কমানো যায়। আসুন দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি কার্যকর কর বাঁচানোর কৌশল।
১. NPS ব্যবহার করে কর ছাড়:
নতুন কর ব্যবস্থায় NPS (ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম) অন্যতম শক্তিশালী কর-ছাড়ের উপায়। একজন কর্মচারীর বেসিক বেতনের ১৪% পর্যন্ত যদি নিয়োগকর্তা NPS-এ অবদান রাখেন, তবে তা সম্পূর্ণ করমুক্ত থাকে (ধারা ৮০CCD(2) অনুসারে)। দিল্লির ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট অভিষেক পাঠকের মতো অনেকেই NPS-কে উপেক্ষা করেন দীর্ঘমেয়াদি লক-ইন ভেবে, কিন্তু এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতের জন্য যেমন নিরাপদ, তেমনি কর ছাড়ের দিক থেকেও লাভজনক।
৬০ বছর বয়সে NPS থেকে ৬০% পর্যন্ত টাকা করমুক্তভাবে তোলা যায় (ধারা ১০(১২এ)), যা এটিকে একটি স্মার্ট কর পরিকল্পনার হাতিয়ার বানিয়ে তোলে।
২. EPF অবদান বাড়ানো:
অনেক কর্মচারী PF-এর সর্বনিম্ন সীমা (₹১৫,০০০-এর উপর ১২% অর্থাৎ ₹১,৮০০) দিয়ে অবদান দেন। কিন্তু নিজের বেসিক বেতন যদি এর থেকে বেশি হয়, তাহলে পুরো বেতনের ১২% পর্যন্ত অবদান রাখা যায় EPF-এ। এতে করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় বাড়ে এবং নিয়োগকর্তার দিক থেকে আসা অবদানও করমুক্ত থাকে।
এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, EPF ও NPS-এ নিয়োগকর্তার সম্মিলিত অবদান ₹৭.৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে অতিরিক্ত অংশ করযোগ্য হয়ে যায়। নিজস্ব PF অবদানের ক্ষেত্রেও বার্ষিক ₹২.৫ লক্ষ টাকার উপরে হলে তা করযোগ্য হয়।
৩. পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার:
কিছুটা বিতর্কিত হলেও, অ-উপার্জনকারী অভিভাবকের নামে উপহার হিসেবে টাকা দিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করলে সুদের আয় করমুক্ত থাকতে পারে, যদি তাদের মোট আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকে। তবে এটি ক্লাবিং রুলের মধ্যে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়, কারণ তাঁদের আয় করদাতার আয়ের সঙ্গে ক্লাব করা হয়।৪. FDs ছেড়ে আর্বিট্রেজ ফান্ডে রূপান্তর:
যাঁরা Fixed Deposit (FD) পছন্দ করেন তাদের জন্য কর বাঁচানোর একটি বিকল্প হলো Arbitrage Fund। FD-তে সুদ প্রতিবছর করযোগ্য হলেও Arbitrage Fund-এ এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখা হলে ১২.৫% হারে লাভ কর দিতে হয় – এবং সেটিও শুধুমাত্র বিক্রির সময়। এর ফলে কম্পাউন্ডিং-এর সুবিধা সম্পূর্ণভাবে পাওয়া যায়।
এছাড়া, প্রতি বছরে ১.২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে লাভ তুলে পুনরায় বিনিয়োগ করলে “গেইন হারভেস্টিং” এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের করের বোঝাও হ্রাস করা যায়।
৫. স্বনিযুক্তদের জন্য ৪৪ADA ধারার সুবিধা:
যাঁরা কনসালট্যান্ট, ফ্রিল্যান্সার বা স্বনিযুক্ত তাঁদের জন্য ৪৪ADA ধারা একটি বড় করছাড়ের সুযোগ। এই ব্যবস্থায় বার্ষিক আয় ₹৭৫ লক্ষ পর্যন্ত হলে তার ৫০% করযোগ্য ধরা হয়। খরচপত্র বা অ্যাকাউন্ট রাখার ঝামেলা নেই। এর ফলে বহু পেশাদারই করযোগ্য আয় কমিয়ে নেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই করের আওতার বাইরে চলে যান।
৬. অন্যান্য ছাড় ও কর পরিকল্পনা:
নতুন কর ব্যবস্থায় বহু জনপ্রিয় ছাড় নেই, তবে কিছু কিছু ব্যতিক্রম এখনো রয়েছে। যেমন:
যদি কেউ বাড়ি ভাড়া দেন, তাহলে ঋণের উপর প্রদত্ত সুদের পরিমাণ (সীমার মধ্যে) ছাড় হিসাবে দাবি করা যায় (ধারা ২৪(b))।
কাজ সংক্রান্ত ট্রেনিং বা শিক্ষা খরচ, যা কর্মক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য হয়েছে, তাও ছাড় হিসাবে দাবি করা যেতে পারে।
নতুন কর ব্যবস্থায় ছাড় কম থাকলেও কর পরিকল্পনা এখনও গুরুত্বপূর্ণ। কর বাঁচাতে গিয়ে অযথা ভুল বিনিয়োগ নয়, বরং নিজের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকির প্রবণতা এবং তারল্য বিবেচনায় রেখে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
স্মার্টভাবে পরিকল্পনা করলে কর কমানো যেমন সম্ভব, তেমনি ভবিষ্যতের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যায়।