‘সনাতন ধর্ম ভারতকে ধ্বংস করেছে’, এনসিপি বিধায়কের মন্তব্যে বিতর্ক

ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি-শরদচন্দ্র পাওয়ার (এনসিপি-এসপি) বিধায়ক জিতেন্দ্র আওহাদের সনাতন ধর্ম (Sanatana Dharma) নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে। তিনি দাবি করেছেন, “সনাতন ধর্ম…

Sanatana Dharma controversy

ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি-শরদচন্দ্র পাওয়ার (এনসিপি-এসপি) বিধায়ক জিতেন্দ্র আওহাদের সনাতন ধর্ম (Sanatana Dharma) নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে। তিনি দাবি করেছেন, “সনাতন ধর্ম ভারতকে ধ্বংস করেছে। সনাতন ধর্ম বলে কোনো ধর্ম কখনোই ছিল না। আমরা হিন্দু ধর্মের অনুসারী।”

এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জাতীয় মুখপাত্র এবং সাংসদ সম্বিত পাত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনসিপি-এসপি নেতা শরদ পাওয়ার এবং তাঁর কন্যা সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের কাছে জানতে চেয়েছেন, “এটি কি আপনার দলের অফিসিয়াল অবস্থান, নাকি এটি শুধুই জিতেন্দ্র আওহাদের ব্যক্তিগত মতামত?” 

   

আওহাদের মন্তব্য ও বিতর্ক

জিতেন্দ্র আওহাদ, যিনি মুম্বাইয়ের মুম্ব্রা-কালওয়া কেন্দ্র থেকে চারবারের বিধায়ক, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, “সনাতন ধর্ম ভারতকে ধ্বংস করেছে। এই তথাকথিত সনাতন ধর্মই ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের রাজ্যাভিষেকে বাধা দিয়েছিল। এই ধর্মই ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজকে অপমান করেছিল।”

তিনি আরও দাবি করেন, “সনাতন ধর্মের অনুসারীরা সাবিত্রীবাঈ ফুলের উপর গোবর নিক্ষেপ করেছিল, জ্যোতিরাও ফুলেকে হত্যার চেষ্টা করেছিল এবং শাহু মহারাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। এই ধর্মই বাবাসাহেব আম্বেদকরকে পড়াশোনা বা জল পান করতে বাধা দিয়েছিল।”

আওহাদ বলেন, “বাবাসাহেব আম্বেদকর এই সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, মনুস্মৃতি পুড়িয়েছিলেন এবং এর নিপীড়নমূলক ঐতিহ্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সনাতন ধর্ম ও এর সনাতনী মতাদর্শ বিকৃত।”

আওহাদের এই মন্তব্য ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিতসহ সাতজনের খালাসের পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। এই মামলায় বিস্ফোরণের জন্য “সাফরন টেরর” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল, যা আওহাদের মন্তব্যের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। তিনি সনাতন ধর্মকে শিবাজি, ফুলে, আম্বেদকর এবং অন্যান্য সমাজ সংস্কারকদের প্রতি অবিচারের জন্য দায়ী করেছেন।

বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র আওহাদের মন্তব্যকে “সনাতন ধর্মের অপমান” এবং “ভারতের সৌন্দর্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আওহাদ সত্যকে অপমান করেছেন, শিবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং ভারতের সৌন্দর্যের বিরোধিতা করেছেন, যে ভারত তার সকলের প্রতি সম্মানের জন্য পরিচিত।”

Advertisements

পাত্র শরদ পাওয়ার এবং সুপ্রিয়া সুলের কাছে প্রশ্ন তুলে বলেন, “এটি কি এনসিপি-এসপি-র অফিসিয়াল অবস্থান, নাকি আওহাদের ব্যক্তিগত মত?” তিনি আরও বলেন, “আমরা সহনশীল, তাই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদি এই মন্তব্য ইসলাম বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে করা হতো, তবে উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে পাওয়া যেত না।”

বিজেপি নেতা রাম কদম আওহাদের মন্তব্যকে “অসম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে” বলে সমালোচনা করেছেন এবং তাকে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সনাতন ধর্মকে অপমান করার অভিযোগ করেছেন। আরেক বিজেপি নেতা রাজ কে পুরোহিত বলেন, “আওহাদ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। সম্প্রদায়কে খুশি করার জন্য তিনি এমন মন্তব্য করেন।”

শিবসেনার প্রতিক্রিয়া

শিবসেনা নেত্রী শাইনা এনসি আওহাদের মন্তব্যকে “শিক্ষার অভাব” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “বিরোধীদের মধ্যে সনাতন ধর্মের সমালোচনা করা একটি প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সনাতন ধর্মকে হিন্দু ধর্ম থেকে আলাদা করে বিকৃত মতাদর্শ বলা তার অজ্ঞতার প্রমাণ।”

রেখার হাত ধরে বিধানসভা বদলে গেল ই-বিধানে

এনসিপি-এসপি-র অবস্থান

এখনো পর্যন্ত শরদ পাওয়ার বা সুপ্রিয়া সুলে আওহাদের মন্তব্যের বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেননি। তবে, আওহাদের এই মন্তব্য এনসিপি-এসপি-র অভ্যন্তরীণ মতাদর্শিক বিতর্কের ইঙ্গিত দেয়, যা শরদ পাওয়ার নেতৃত্বাধীন দলটির জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। আওহাদের পূর্ববর্তী বিতর্কিত মন্তব্য, যেমন রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তীকে “দাঙ্গার জন্য উৎসব” বলা, দলের মধ্যে এবং বিরোধীদের কাছে বিতর্কের কারণ হয়েছিল।

জিতেন্দ্র আওহাদের সনাতন ধর্ম নিয়ে মন্তব্য মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিজেপি এবং শিবসেনা এই মন্তব্যকে হিন্দু ধর্ম এবং ভারতীয় সংস্কৃতির উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে, যখন আওহাদ এটিকে সামাজিক সংস্কারের প্রেক্ষাপটে উত্থাপন করেছেন। এই বিতর্ক আসন্ন মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।