শুল্ক ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব! মার্কিন অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা

বিশ্বের অর্থনৈতিক দৃশ্যে একটি বড় ঝাঁকুনি দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মধ্যে শুল্ক নীতি নিয়ে উত্থাপিত বিতর্ক (US-India Tariff Tensions) এবং তার ফলে সৃষ্ট…

US tariff reprieve for India

বিশ্বের অর্থনৈতিক দৃশ্যে একটি বড় ঝাঁকুনি দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মধ্যে শুল্ক নীতি নিয়ে উত্থাপিত বিতর্ক (US-India Tariff Tensions) এবং তার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্ব বাজারে কম্পন তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, যা শুধুমাত্র একটি দিনের মধ্যে ঘটেছে। এই ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের ওপর আরোপিত ২৫% শুল্ক, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এই শুল্ক আরোপের পেছনে রয়েছে মার্কিন প্রশাসনের একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কৌশল, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ক্রমশ দূরত্ব সৃষ্টি করছে।

শুল্ক আরোপের পটভূমি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে গত কয়েক মাসে শুল্ক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গেছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত শুল্ক হার ২.৫% থেকে ২৭% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ভারতের ক্ষেত্রে ২৫% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভারত মার্কিন বাজারে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের মাল আমদানি করে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জি.টি.আর.আই.)-এর একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, এই শুল্কের ফলে ভারতের রপ্তানি ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে ৩০% পর্যন্ত হ্রাস ঘটতে পারে, যা ৬০.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। এই শুল্ক থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস, শক্তি পণ্য এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো কিছু শিল্প বাদ দেওয়া হলেও, বাকি খাতে এই ধাক্কা গুরুতর।

   

মার্কিন বাজারে ধ্বংসের ছবি
আজকের ঘটনার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং ন্যাসড্যাক দুটিই দুই মাসের নিম্নতম স্তরে নেমে গেছে। প্রযুক্তি খাতের জায়ান্ট কোম্পানিগুলো, যেমন এনভিডিয়া (-২.৩৩%) এবং অ্যাপল (-২.৫০%), বাজারে লাল চিহ্নিত করেছে, যা অর্থনৈতিক অস্থিরতার একটি স্পষ্ট সংকেত। অ্যামাজনের দুর্বল আর্থিক ফলাফল এবং হতাশাজনক চাকরির তথ্য এই পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অবস্থার জের ধরে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কাটতে বাধ্য হতে পারে, যা বাজারে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য সুযোগ
ভারত সরকার এখনও এই শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কঠোর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেনি, তবে বাণিজ্যিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে ভারত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিগত বাজারে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে। ভারতীয় রপ্তানিকার্ডের জন্য এই ধাক্কা হলেও, ভারতীয় শিল্পপতিরা এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স খাতে ভারত নিজেকে পুনর্গঠন করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদীভাবে দেশের অর্থনীতিকে সুস্থ করতে সাহায্য করবে।

বিশ্ববাজারে প্রভাব
মার্কিন অর্থনৈতিক পতনের প্রভাব শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ নয়; এটি গ্লোবাল মার্কেটেও কম্পন সৃষ্টি করেছে। এশিয়ান বাজারে টোকিও এবং শঙ্ঘাই স্টক এক্সচেঞ্জেও দ্রুত পতন দেখা গেছে। ইউরোপীয় বাজারে ইউরো এলাকার জিডিপি বৃদ্ধি হারও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। এদিকে, স্বর্ণের দামে ঊর্ধ্বমুখী ঝোঁক দেখা দিয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।

Advertisements

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য মার্কিন প্রশাসন এবং ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান নীতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে, যা উভয় দেশের জন্যই ক্ষতিকর হবে। ভারতের ক্ষেত্রে, স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির দিকে এগোনো এখন একটি বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ।

এই ঘটনা অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, ভারত এই সুযোগে নিজের শিল্পক্ষেত্রকে বিস্তার করতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। অন্যদিকে, মার্কিন অর্থনীতির জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা, যা তাদের বাণিজ্য নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে। আগামী দিনে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কী দিকে এগোবে, তা নির্ভর করবে উভয় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।

সুতরাং, শুল্ক ইস্যুতে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দূরত্ব এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। এই অবস্থা থেকে উভয় দেশ কীভাবে বের হবে, তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি কৌতূহলের বিষয়।