বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (Election Commission) নতুন ভোটার আইডি কার্ড বা ইলেক্টরস ফটো আইডেন্টিটি কার্ড (ইপিক) জারির উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়া রাজ্যের ভোটার তালিকাকে আরও সঠিক ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, নতুন ভোটারদের নিবন্ধনের পাশাপাশি বিদ্যমান ভোটারদের তথ্য সংশোধন এবং ইপিক কার্ড প্রতিস্থাপনের জন্যও এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে, যা ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।নতুন ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য বিহারের নাগরিকরা অনলাইন এবং অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদনের জন্য নাগরিকদের নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (voters.eci.gov.in) বা বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে (ceoelection.bihar.gov.in) গিয়ে ‘সিটিজেন সার্ভিসেস/অনলাইন রেজিস্ট্রেশন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ফর্ম ৬ পূরণ করতে হবে।
ফর্মে নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ সহ প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে বয়স ও ঠিকানার প্রমাণপত্র এবং একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোড করতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হবে, যা দিয়ে আবেদনের অবস্থা ট্র্যাক করা যাবে। বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) তথ্য যাচাইয়ের পর ভোটার আইডি কার্ড নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠানো হবে।
অফলাইন পদ্ধতিতে আবেদনের জন্য নিকটস্থ নির্বাচনী অফিসে গিয়ে ফর্ম ৬ পূরণ করতে হবে। এর সঙ্গে জন্ম সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা রেশন কার্ডের মতো বয়স ও ঠিকানার প্রমাণপত্র এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্র সরাসরি অফিসে বা ডাকযোগে জমা দেওয়া যাবে। বিএলও আবেদন যাচাই করে ভোটার আইডি কার্ড জারি করবেন। এছাড়া, ঠিকানা পরিবর্তন বা ভোটার তালিকায় সংশোধনের জন্য ফর্ম ৮এ পূরণ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যা রাজ্যের মোট ভোটারের ৮.৫ শতাংশ। এই প্রক্রিয়ায় ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের শুধুমাত্র পূর্ব-পূরণ করা এনুমারেশন ফর্ম জমা দিতে হবে।
তবে, আধার কার্ড, রেশন কার্ড বা পুরোনো ভোটার আইডি কার্ডকে এককভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে না, কারণ এগুলো শুধুমাত্র পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) সহ ইন্ডিয়া ব্লকের নেতারা তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, এই প্রক্রিয়ায় তাঁর নামও খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে, নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেছে যে তেজস্বীর নাম ধীঘা বিধানসভা এলাকার পাটনা সাহিব লোকসভা কেন্দ্রের তালিকায় ক্রমিক নম্বর ৪১৬-এ রয়েছে। এই বিতর্কে বিজেপি নেতা তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি তেজস্বীকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে আখ্যায়িত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় খসড়া তালিকার ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধেও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন।
জামুই জেলার জেলাশাসক শ্রী নবীন জানিয়েছেন, “এসআইআর প্রক্রিয়া এখনও চলছে। প্রথম পর্যায়ে ১৩,৪০,০৯০ জন ভোটারের তথ্য সহ খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ১২,৪৮,২০৮ জনের তথ্য যাচাই করা হয়েছে।” নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কোনো যোগ্য ভোটার যেন বাদ না পড়ে, সেই লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
ভোটাররা ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত ফর্ম ৬ পূরণ করে তাদের নাম পুনর্বহালের জন্য আবেদন করতে পারেন।নতুন ভোটার আইডি কার্ড জারির এই উদ্যোগ বিহারের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে সহায়তা করবে।
ভোটার আইডি কার্ড শুধুমাত্র ভোটদানের জন্যই নয়, এটি সরকারি পরিষেবা ও স্কিমে অংশগ্রহণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ই-ইপিক বা ইলেকট্রনিক ভোটার আইডি কার্ডও একটি বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, যা স্মার্টফোনে পিডিএফ আকারে সংরক্ষণ করা যায়।
এই প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক চলছে। আরজেডি এবং ইন্ডিয়া ব্লকের নেতারা এসআইআর প্রক্রিয়াকে ‘ভোট বন্দি’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টে এটি বন্ধের দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে আধার, ইপিক এবং রেশন কার্ডকে বৈধ নথি হিসেবে বিবেচনার পরামর্শ দিলেও, কমিশন জানিয়েছে, এগুলো নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
ফরেনসিক অডিটে আর্থিক জালিয়াতির পর্দাফাঁস SEBI-র
বিহারের নাগরিকদের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম নিশ্চিত করতে এবং নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য সময়মতো আবেদন করতে। এই উদ্যোগ রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।