নির্বাচন কমিশনের ‘ভোট চুরি’ ইস্যুতে রাহুলের পাশে ফারুখ

জাতীয় সম্মেলনের (জেকেএনসি) প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ (Farooq Abdullah)শনিবার লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ‘অ্যাটম বোমা’ মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, “বিহারে যে নির্বাচন হতে…

Farooq Abdullah backs rahul gandhi

জাতীয় সম্মেলনের (জেকেএনসি) প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ (Farooq Abdullah)শনিবার লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ‘অ্যাটম বোমা’ মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, “বিহারে যে নির্বাচন হতে চলেছে, তার জন্য পূর্ব থেকেই ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে ক্ষমতাসীন দল জয়ী হয়। রাহুল গান্ধী এই কথাই বলেছেন।

আমি আগামী ৭ আগস্ট তাঁর সঙ্গে দেখা করব এবং এ বিষয়ে আলোচনা করব।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাহুল গান্ধীর অভিযোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে কংগ্রেস নেতা নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরি’র গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন।

   

রাহুল গান্ধী শুক্রবার সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দাবি করেছেন যে তাঁর দলের হাতে এমন প্রমাণ রয়েছে যা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘অ্যাটম বোমা’র মতো কাজ করবে। তিনি বলেছেন, “আমরা ছয় মাস ধরে তদন্ত করেছি এবং এমন প্রমাণ পেয়েছি যে নির্বাচন কমিশন ভোট চুরি করছে এবং এটি বিজেপির পক্ষে করছে।

এই প্রমাণ প্রকাশিত হলে সমগ্র দেশ জানবে যে কমিশন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে।” তিনি আরও বলেছেন, “যারা এই কাজে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। এটি দেশের বিরুদ্ধে কাজ করার সমান, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার থেকে কম নয়।”

ফারুক আবদুল্লাহর এই বক্তব্য বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এসেছে, যেখানে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইন্ডিয়া ব্লকের নেতারা, যার মধ্যে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, এনসিপি-এসপি, শিবসেনা (ইউবিটি) এবং অন্যান্য দল রয়েছে।

লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে একটি যৌথ চিঠি দিয়ে বিহারের ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনার দাবি জানিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে যে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরিদ্র, দলিত এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিহারের ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদ সংসদের উভয় কক্ষে উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। শুক্রবার লোকসভায় এই ইস্যুতে বিরোধী সদস্যরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করেন, যার ফলে দিনের জন্য সংসদের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এই বিষয়ে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় বিজেপি-আরএসএসের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিহারের কোটি কোটি ভোটারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”

Advertisements

ফারুক আবদুল্লাহর মন্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ৭ আগস্টের বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা জানিয়েছেন। জাতীয় সম্মেলনের প্রধান হিসেবে তাঁর এই অবস্থান ইন্ডিয়া ব্লকের ঐক্যকে আরও জোরদার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে এসেছেন, এবং এই মন্তব্য তাঁর সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।

নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং জানিয়েছে যে তারা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য উপেক্ষা করা হবে।” এদিকে, কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে ‘গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, “এটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র।”

এই ঘটনা বিহারের আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, নির্বাচন কমিশনের এই প্রক্রিয়া বিজেপির পক্ষে ফলাফল নির্ধারণের জন্য পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, তাঁর দল আগামী ৫ আগস্ট বেঙ্গালুরুতে একটি বৃহৎ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করবে, যেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থাকবেন।

মহারাজার মূর্তি বসানোর কাজে ফের নামল ক্ষত্রিয় সোসাইটি

এই বিতর্ক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ফারুক আবদুল্লাহর মন্তব্য এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর আসন্ন বৈঠক এই ইস্যুতে আরও আলোকপাত করতে পারে।