হাতে থাকা ২০০০ টাকার পুরনো নোট নিয়ে চিন্তায়? জেনে নিন সমাধানের সহজ উপায়

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI), নিয়মিতভাবে তার মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনে। ২০২৩ সালের ১৯ মে RBI একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে—২০০০ টাকার নোট…

হাতে থাকা ২০০০ টাকার পুরনো নোট নিয়ে চিন্তায়? জেনে নিন সমাধানের সহজ উপায়

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI), নিয়মিতভাবে তার মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনে। ২০২৩ সালের ১৯ মে RBI একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে—২০০০ টাকার নোট বাজার থেকে প্রত্যাহার করার। সেই সময়ে দেশে মোট ৩.৫৬ লক্ষ কোটি টাকার ২০০০ টাকার নোট চলাচলে ছিল।
তবে মাত্র এক বছরের মধ্যেই এই নোটের প্রায় ৯৮.৩১% ফিরে এসেছে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায়। মানি কন্ট্রোলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে জনগণের হাতে মাত্র ৬,০১৭ কোটি টাকার মতো ২০০০ টাকার নোট অবশিষ্ট রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা এই নোট ব্যবহার থেকে সরে এসেছেন।

এখন কীভাবে বদলাবেন ২০০০ টাকার নোট?
অক্টোবর ৯, ২০২৩ থেকে দেশের সমস্ত ব্যাঙ্ক এই নোট বদলানো বন্ধ করে দিয়েছে। তবে, RBI এখনও এই পরিষেবা প্রদান করছে তার ১৯টি ‘ইস্যু অফিসে’। এই অফিসগুলি রয়েছে নিম্নলিখিত শহরগুলিতে:
আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, বেলাপুর, ভোপাল, ভুবনেশ্বর, চণ্ডীগড়, চেন্নাই, গৌহাটি, হায়দরাবাদ, জয়পুর, জম্মু, কানপুর, কলকাতা, লখনউ, মুম্বই, নাগপুর, নয়াদিল্লি, পাটনা এবং তিরুবনন্তপুরম।

   

এই অফিসগুলোতে আপনি গিয়ে সরাসরি ২০০০ টাকার নোট জমা দিতে পারেন অথবা সেই পরিমাণ অর্থ আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা নিতে পারেন।

যদি আপনি ওই শহরগুলির বাইরে থাকেন?
এই ক্ষেত্রে RBI এক বিশেষ বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে। আপনি আপনার কাছাকাছি ডাকঘরের মাধ্যমে ২০০০ টাকার নোট পাঠিয়ে দিতে পারেন RBI-এর যেকোনো এক ইস্যু অফিসে। এর জন্য আপনাকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে যেখানে থাকবে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ, জমা দেওয়া নোটগুলির নির্দিষ্ট তথ্য এবং একটি পরিচয়পত্রের অনুলিপি। RBI যখন এই নোটগুলি গ্রহণ ও যাচাই করবে, তখন সেই অনুযায়ী টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে।

এই ব্যবস্থা বিশেষভাবে উপকারী হয়েছে ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য। যদিও ২০০০ টাকার নোট এখনও আইনসম্মত মুদ্রা (legal tender) হিসেবে গণ্য হচ্ছে, তবে বাস্তবে এখন তা প্রায় দেখাই যায় না।

কেন ২০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়া হলো?
RBI-এর ‘ক্লিন নোট পলিসি’-র আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, পুরনো, নষ্ট অথবা কম ব্যবহৃত নোট ধাপে ধাপে বাজার থেকে তুলে নেওয়া।

২০১৬ সালের নভেম্বরে যখন দেশজুড়ে বড় আকারে নোটবন্দি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন ৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট বাতিল করা হয়। সেই সময় হঠাৎ করে তৈরি হওয়া নগদ টাকার সংকট মোকাবিলায় দ্রুত চালু করা হয় ২০০০ টাকার নতুন নোট।

তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকেই RBI এই নোট ছাপানো বন্ধ করে দেয়। তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোট বাজারে উপলব্ধ ছিল, এবং ছোট মূল্যের লেনদেনের জন্য এই নোটগুলোই বেশি উপযোগী ছিল।

Advertisements

এই কারণেই RBI মনে করে, ২০০০ টাকার নোট আর দরকার নেই। ফলে ধাপে ধাপে এটি তুলে নেওয়া শুরু হয়, যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে এটি জমা দিতে বা পরিবর্তন করতে পারেন।

আইনত ২০০০ টাকার নোট এখনো বৈধ?
হ্যাঁ, RBI স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ২০০০ টাকার নোট এখনও বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত। তবে, এটি এতটাই কম ব্যবহৃত হচ্ছে যে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এটি নিতে চাইছেন না। ফলে এটি আর কার্যত বাজারে সচল নেই।

সাধারণ মানুষের কী করণীয়?

যদি আপনার কাছে এখনও ২০০০ টাকার নোট থাকে, তাহলে তা অবিলম্বে জমা দিন RBI-এর ইস্যু অফিসে গিয়ে অথবা ডাকযোগে পাঠিয়ে।

রসিদ ও পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।

কারো কাছ থেকে বড় অঙ্কের নগদ নিলে নোটের গুণমান ও বৈধতা যাচাই করে নিন।

২০০০ টাকার নোট ভারতের ইতিহাসে একটি সাময়িক প্রয়োজন হিসেবে এসেছিল এবং এখন ধাপে ধাপে বিদায় নিচ্ছে। RBI-এর পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় এটি একটি সুসংহত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। জনগণের দায়িত্ব এখন এটুকুই—সময় থাকতে নিজের হাতে থাকা ২০০০ টাকার নোট যথাযথভাবে জমা বা পরিবর্তন করে নেওয়া।