নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশপুর: ‘দুয়ারে সরকার’-এর সাফল্যের পর এবার রাজ্যের নতুন উদ্যোগ ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ (Amader Para Amader Samadhan)। শনিবার থেকেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে এই জনমুখী প্রকল্পের শিবির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি ব্লকে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এই উপলক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের ৫ নম্বর মুগবাসান গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজুয়াড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল ক্যাম্প। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী তথা কেশপুরের বিধায়িকা শিউলি সাহা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন গরাই, সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক কৌশিস ঘোষ, পঞ্চায়েত স্তরের আধিকারিক, সদস্য ও অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিনিধি।
এদিনের ক্যাম্পে শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা, দাবি ও আবেদন প্রশাসনের সামনে তুলে ধরেন। কেউ বার্ধক্য ভাতা, কেউ আবাস যোজনা, কেউ আবার কন্যাশ্রী বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ফর্ম জমা দিতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষাকালে কিছু রাস্তায় জল জমে যাওয়ার কারণে যাতায়াতে সমস্যা হয়। অনেক এলাকায় এখনও পানীয় জলের সঠিক ব্যবস্থা হয়নি।
মন্ত্রী শিউলি সাহা স্থানীয়দের অভিযোগ শোনেন এবং জানান, “কেশপুরে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কিছু রাস্তা ও পানীয় জলের সমস্যা রয়ে গিয়েছে, আমরা সেগুলির কাজও শীঘ্রই শুরু করব। এই প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন— সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজের ফল মানুষ পেতে শুরু করবে।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান প্রকল্প শুধু সরকারি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া নয়, সরাসরি মানুষের কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনে তা দ্রুত সমাধানের পথে হাঁটবে প্রশাসন।”
অন্যদিকে, কেন্দ্রের SIR (Special Investigation Report) নীতিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ভারতের নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে, তার জবাবদিহি করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকেই। রাজ্য সরকার বরাবরই মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”
স্থানীয়রা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, “আগে শুধু আবেদন জমা নিত, এখন সমস্যা শুনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন অফিসাররা। এতে অনেকটাই স্বস্তি।”
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল – সরকারি পরিষেবা পৌঁছে যাক প্রত্যন্ত পাড়ায়, সরকারি আধিকারিকেরা গ্রামে গিয়ে সমস্যার সমাধান করুন, যাতে সাধারণ মানুষকে আর বারবার বিডিও অফিস বা ব্লক দপ্তরের চক্কর কাটতে না হয়।
রাজ্যজুড়ে এই ক্যাম্প চলবে আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে মানুষের চাহিদা অনুসারে কাজ বণ্টন ও তা বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করা হবে। এই নতুন প্রকল্প একদিকে যেমন Duare Sarkar-এর পরবর্তী ধাপ, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “সরকার আপনার দুয়ারে নয়, এবার পাড়ায় পাড়ায়” দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ।