শ্রমিক-কৃষকদের বিজেপি প্রীতি দেখে ক্ষুব্ধ বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক

শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির একাংশের বিজেপিমুখী মনোভাব দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলাগড়ের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারি (Manoranjan Byapari )। শনিবার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক…

Balagarh TMC MLA Manoranjan Byapari Slams Labourers and Farmers for BJP Support

শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির একাংশের বিজেপিমুখী মনোভাব দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলাগড়ের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারি (Manoranjan Byapari )। শনিবার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক বিস্ফোরক পোস্টে তিনি তুলে ধরেছেন শ্রমিক ও কৃষকদের স্মৃতিভ্রষ্টতা এবং বিজেপির প্রতি ‘অন্ধ ভক্তি’র অভিযোগ।

ফেসবুক পোস্টে বিধায়ক লিখেছেন, “বিহারের কোটি কোটি মানুষ রুজি-রোজগারের সন্ধানে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। কোভিডের সময় যখন সেইসব শ্রমিকরা বাড়ি ফিরছিল, রাস্তায় গরু-মোষ কুকুরের মতো তাদের পেটানো হচ্ছিল। সেই সময় তারা চোখের জলে বলেছিল—‘আমরা আর বিজেপিকে ভোট দেব না’। কিন্তু ভোট এলে, সেই প্যাদানি খাওয়া মানুষগুলোরই দেখা মেলে না। বরং তারাই আবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে জেতায়। কেন?”

   

এই প্রসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়েছেন কৃষক আন্দোলনের কথাও। লিখেছেন, “পাঞ্জাব-হরিয়ানা থেকে কৃষকরা দিল্লিতে এসে আন্দোলন করলেন। প্রায় ৭০০ জন মারা গেলেন। সেসময় অনেকেই বলেছিল—‘ভুল করেছি বিজেপিকে ভোট দিয়ে’। কিন্তু লোকসভা ভোটে আবার সেই বিজেপিই ২৪০টা আসনে জয়ী হলো। তাহলে কারা দিল এই ভোট? ভারত তো কৃষিপ্রধান দেশ। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। তাহলে কি তারাই আবার বিজেপিকে ভোট দিল?”

ক্ষোভের কেন্দ্রে নমঃশূদ্র, মতুয়া, রাজবংশীদের ভূমিকা
মনোরঞ্জন ব্যাপারির ক্ষোভ শুধু বিহার বা পাঞ্জাবের দিকে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং পশ্চিমবঙ্গের ভিতরেই বিজেপি-সমর্থন পাওয়া কিছু নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি তাঁর আঙ্গুল উঠেছে। তিনি লিখেছেন, “এই ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে—বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে—বাঙালি নমঃশূদ্র, মতুয়া, রাজবংশীরা আজ ঝাড় খাচ্ছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যে আসনগুলোতে জেতে, তার পিছনেও এইসব জনগোষ্ঠীরই ভোট থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন বিজেপি তাদের ক্যালানি দিচ্ছে, কিন্তু আর এক বছর পরেই সব ব্যথা, অপমান ভুলে আবার ভোট দেবে বিজেপিকেই। এটা একটা জাতিগত স্মৃতিভ্রষ্টতা।”

নিবিড় নির্বাচন ও বৈধতার প্রশ্ন
বিধায়কের বক্তব্যে উঠে এসেছে আসন্ন নির্বাচনে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রসঙ্গও। তাঁর মতে, “যদি এইবার ঠিকভাবে কাগজপত্র যাচাই হয়, তাহলে ২০০০ সালের পরে পশ্চিমবঙ্গে এসে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ নমঃশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে কাটা পড়বে। কারণ তাদের কাছে বৈধ নথিপত্র নেই।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার পাশাপাশি, কিছুদিন পর তাদের আধার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদিও অবৈধ হয়ে যাবে। তখন তারা বুঝবে কী ভুল করেছিল। কিন্তু তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।”

Advertisements

বিজেপিকে কটাক্ষ: ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে’ গানে ইঙ্গিত
বিজেপির প্রচার ও ভোট পরিচালনা কৌশলের কটাক্ষ করে তৃণমূল বিধায়ক লেখেন, “এই যে গান আছে না—‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে, আমরা ভেবে করবো কি’—ঠিক তেমনই অবস্থা। কেলাচ্ছে বিজেপি, ক্যালানি খাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু আমরা নিয়ে ভেবে কী করব?”

সমর্থন ও সমালোচনার জোড়া স্রোত
বিধায়কের এই পোস্ট ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আলোড়ন তুলেছে। অনেকে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করেছেন, “এটাই আসল সত্যি। মানুষ ভুলে যায় নিজেদের অপমান।” আবার অনেকে সমালোচনাও করছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলেছেন, “জনগণ যাদের ভোট দেয়, তাদের অপমান করা একজন বিধায়কের কাজ হওয়া উচিত নয়।”

তবে মনোরঞ্জন ব্যাপারি নিজে তাঁর বক্তব্যে অনড়। তাঁর মতে, “যতক্ষণ না এই শ্রেণির মানুষ বাস্তব উপলব্ধি করছে, ততদিন তারা গোবর খাবে, আর ‘জয় শ্রীরাম’ বলেই যাবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মনোরঞ্জন ব্যাপারির এই বক্তব্য মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের ভিতরকার হতাশা ও অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। ভোটের আগে যেভাবে জাতিগত ও শ্রেণিগত সমর্থন আশা করা হচ্ছিল, বাস্তবে তার বিপরীত ফলাফল সামনে আসায় এই ক্ষোভ বেড়েছে।

এখন দেখার, এই মন্তব্যের ফলে তৃণমূল নেতৃত্ব কী অবস্থান নেয়। কারণ, এই বক্তব্যে ভোটারদের একাংশকে সরাসরি ‘অন্ধ’ বলার ঝুঁকি রয়েছে। সেইসঙ্গে, বিজেপি এই মন্তব্যকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের সুযোগ নিতে পারে।

শেষ কথা, একাধিক আন্দোলন, মৃত্যু, নিপীড়ন—সব কিছু ভুলে ভোটবাক্সে ভোট পড়ে বিজেপির দিকে। আর সেই বাস্তবতাই যেন তৃণমূল বিধায়কের ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়েছে। তাঁর মতে, মানুষ যতদিন না সরাসরি ঘাড় ধাক্কা খাবে, ততদিন তাদের চেতনা জাগবে না। কিন্তু এই বক্তব্যে যে রাজনৈতিক তরজা আরও তীব্র হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।