কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ অষ্টম বেতন কমিশন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ইউনিয়ন ক্যাবিনেট ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি এই কমিশন গঠনের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, কমিটির আনুষ্ঠানিক গঠন এবং টার্মস অফ রেফারেন্স (টিওআর) এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই নিবন্ধে আমরা অষ্টম বেতন কমিশন কমিটির গঠন, সম্ভাব্য সময়সীমা এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কমিটি গঠনের অগ্রগতি
ইউনিয়ন ক্যাবিনেট ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা করলেও, কমিটির চেয়ারপারসন এবং সদস্যদের নিয়োগ এখনও বাকি। মানিকন্ট্রোলের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিওআর এপ্রিল ২০২৫-এর মধ্যে ক্যাবিনেটের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হতে পারে, এবং কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু করতে পারে। যদি মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে কমিশন গঠিত হয়, তবে এটি ২০২৬ সালের মার্চ নাগাদ তার রিপোর্ট জমা দিতে পারে। তবে, বর্তমানে কমিটির গঠন এবং টিওআর চূড়ান্ত করতে দেরি হওয়ায়, ২০২৬ সালের জানুয়ারির টার্গেট পিছিয়ে ২০২৭ বা ২০২৮ সাল পর্যন্ত যেতে পারে।
ফিনান্স মিনিস্ট্রি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে রাজ্যসভায় জানিয়েছে, সরকার ইতিমধ্যে প্রধান স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে টিওআর-এর জন্য পরামর্শ চেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)। এক্স-এর পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার নোটিফিকেশনের পর কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ এবং ১৫টি টিওআর-এর ভিত্তিতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
প্রত্যাশিত সময়সীমা
ঐতিহাসিকভাবে, বেতন কমিশনগুলো গঠন থেকে রিপোর্ট জমা দেওয়া পর্যন্ত ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় নেয়। উদাহরণস্বরূপ, সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষণার পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয়েছিল (প্রায় ৫ মাস) এবং ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে, যদি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠিত হয়, তবে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি নাগাদ রিপোর্ট জমা পড়তে পারে। তবে, সরকার চাইলে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর করে বকেয়া পরিশোধ করতে পারে, যেমনটি পূর্ববর্তী কমিশনগুলোর ক্ষেত্রে করা হয়েছিল।
এক্স-এর একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, যদি ১৫ আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে কমিশন গঠিত না হয়, তবে কর্মচারী ইউনিয়নগুলো রাস্তায় নামতে পারে। তবে, এই তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি, এবং এটি কেবল জনমতের প্রতিফলন হতে পারে।
কমিশনের আওতা ও প্রভাব
অষ্টম বেতন কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামো পর্যালোচনা করবে। প্রত্যাশিত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮৩ থেকে ২.৮৬-এর মধ্যে হতে পারে, যার ফলে ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। পেনশনভোগীদের জন্যও অনুরূপ বৃদ্ধি প্রত্যাশিত, যেখানে ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে ২৫,৭৪০ টাকায় বাড়তে পারে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল-জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেকানিজম (এনসি-জেসিএম) ১৫টি প্রধান দাবি পেশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
ন্যূনতম মজুরি সংশোধন।
পে লেভেল একত্রীকরণ (যেমন, লেভেল ১-এর সঙ্গে লেভেল ২)।
পেনশন পুনঃনির্ধারণের সরলীকৃত পদ্ধতি।
অর্থনৈতিক প্রভাব
অষ্টম বেতন কমিশনের বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১.৮ লক্ষ কোটি টাকার ব্যয় হতে পারে, যা সরকারের আর্থিক ঘাটতির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে এই কমিশনের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায়, বাস্তবায়ন ২০২৭ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, অর্থনীতিবিদ ডি.কে. শ্রীবাস্তবের মতে, বেতন বৃদ্ধি ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়াতে পারে, যা অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সহায়ক হবে।
অষ্টম বেতন কমিশন কমিটি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আনুষ্ঠানিক নোটিফিকেশন এবং টিওআর চূড়ান্ত না হওয়ায় বাস্তবায়ন ২০২৭ বা ২০২৮ সাল পর্যন্ত যেতে পারে। কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের প্রত্যাশা পূরণে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালের ২১ জুলাই লোকসভায় এই বিষয়ে ফিনান্স মিনিস্ট্রির জবাব গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা এখন এই কমিশনের রোডম্যাপের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।