সিউড়িতে বিক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগে উত্তেজনা

বীরভূম: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল বীরভূমের সিউড়ি (Suri) শহর। শনিবার দুপুর নাগাদ সিউড়ি প্রশাসন ভবন মোড়ে একদল…

সিউড়িতে বিক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগে উত্তেজনা

বীরভূম: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল বীরভূমের সিউড়ি (Suri) শহর। শনিবার দুপুর নাগাদ সিউড়ি প্রশাসন ভবন মোড়ে একদল বিজেপি কর্মী বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেই সময় সেখানে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর একটি বড় ছবিতে কালি লেপে দেন তাঁরা—এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকা জুড়ে।

ঘটনার পরপরই বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বচসা শুরু হয়। তা রূপ নেয় ধস্তাধস্তিতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত সেখানে পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী। ইতিমধ্যেই সেখান থেকে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

   

স্থানীয় সূত্রে খবর, বিজেপি কর্মীদের একটি অংশ সম্প্রতি সিউড়ি পুরসভার নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ জানাতে প্রশাসন ভবনের সামনে জমায়েত করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, পুরসভা জনসংযোগে ব্যর্থ এবং নাগরিক পরিষেবার হাল ক্রমশ খারাপ হয়ে চলেছে। বিক্ষোভ চলাকালীন হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রীর ছবি লক্ষ্য করে কিছু ব্যক্তি কালি ছোড়েন। এরপরেই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, এটা পরিকল্পিতভাবে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারকে অপমান করার চেষ্টা। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানানো হয়েছে, “এই ধরনের আচরণ রাজনৈতিক শালীনতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিজেপি রাজ্যজুড়ে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে।”

এদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের জেলা সভাপতি অরিজিৎ মণ্ডল দাবি করেন, “আমাদের কর্মীরা কোনও বেআইনি কাজ করেননি। যদি কেউ মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে কালি লেপে থাকে, সেটা পুরোপুরি আবেগের বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ মানুষ সরকারের কাজকর্মে বিরক্ত। পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের কর্মীদের গ্রেফতার করছে।”

ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সিউড়ি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রীর ছবিটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আটক করা বিজেপি কর্মীদের থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

Advertisements

এই ঘটনার পর থেকে সিউড়ি শহরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তৃণমূল কর্মীরা এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রীর অসম্মানের প্রতিবাদে রবিবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে সিউড়িতে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, গোটা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা আইন ভেঙেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনার পটভূমিতে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠছে রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনা কতটা গভীর এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিকৃতি নিয়ে বারবার সংঘর্ষ কতটা সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই ধরনের ঘটনা নির্বাচনের আগে দলীয় অবস্থান শক্ত করার কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, সিউড়ির জনজীবনে চাপা উত্তেজনা এখনও স্পষ্ট। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের সংঘর্ষে জড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে।”