ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে আর বিতর্কের সূচনা করেছেন রাহুল গান্ধী (Rahul)। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলির নামে একটি বিতর্কিত দাবি করেছেন। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন যে, কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার সময় অরুণ জেটলি তাকে হুমকি দিয়েছিলেন।
এই দাবির জবাবে অরুণ জেটলির ছেলে রোহান জেটলি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, তাঁর বাবা ২০১৯ সালে প্রয়াত হয়েছেন, যখন কৃষি আইন ২০২০ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল। এই সময়রেখার অসঙ্গতি উল্লেখ করে রোহান জেটলি রাহুল গান্ধীর দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন এবং এই ধরনের মন্তব্যের জন্য তাঁকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
এই ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।রোহান জেটলির প্রতিক্রিয়ারোহান জেটলি তাঁর সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, “রাহুল গান্ধী এখন দাবি করছেন যে আমার প্রয়াত পিতা অরুণ জেটলি কৃষি আইন নিয়ে তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন।
আমি তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আমার পিতা ২০১৯ সালে প্রয়াত হয়েছেন। কৃষি আইন ২০২০ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল। আরও গুরুত্বপূর্ণ, আমার পিতার স্বভাবে কাউকে বিরোধী মতের জন্য হুমকি দেওয়া ছিল না। তিনি ছিলেন একজন দৃঢ় গণতন্ত্রী এবং সবসময় ঐকমত্য গঠনের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন। যদি এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতো, যা রাজনীতিতে প্রায়ই হয়, তিনি মুক্ত ও খোলা আলোচনার আমন্ত্রণ জানাতেন যাতে সবাই মিলে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যায়।
এটিই ছিল তাঁর স্বভাব এবং এটিই আজ তাঁর উত্তরাধিকার।”রোহান আরও বলেন, “আমি রাহুল গান্ধীকে অনুরোধ করব, যারা আমাদের মাঝে নেই, তাঁদের সম্পর্কে কথা বলার সময় সতর্ক থাকুন। তিনি এর আগেও মনোহর পার্রিকার জির সঙ্গে একই ধরনের কাজ করেছিলেন, তাঁর শেষ দিনগুলোকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যা সমানভাবে খারাপ স্বাদের পরিচয় দেয়।”
রোহানের এই বিবৃতি রাহুল গান্ধীর দাবির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর এই দাবি যে অরুণ জেটলি তাঁকে কৃষি আইন নিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন, তা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে প্রবর্তিত কৃষি আইন নিয়ে ভারতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল, যা কৃষকদের একটি বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়।
এই আইনগুলো পরে ২০২১ সালে প্রত্যাহার করা হয়। রাহুল গান্ধী, যিনি কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা, তিনি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে, তাঁর এই দাবি যে অরুণ জেটলি তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন, তা সময়রেখার দিক থেকে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে সমালোচিত হচ্ছে।
অরুণ জেটলি, যিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট প্রয়াত হন। সুতরাং, ২০২০ সালে প্রবর্তিত কৃষি আইন নিয়ে তাঁর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর কোনো আলোচনা বা সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই ভুল দাবির কারণে রাহুল গান্ধীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিজেপি নেতারা এই মন্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ এবং ‘রাজনৈতিক স্বার্থে প্রয়াত নেতার নামের অপব্যবহার’ বলে অভিহিত করেছেন। রোহান জেটলি তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে, রাহুল গান্ধী এর আগেও প্রয়াত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পার্রিকারের শেষ দিনগুলোকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন।
২০১৯ সালে মনোহর পার্রিকার মৃত্যুর পর রাহুল গান্ধী দাবি করেছিলেন যে, পার্রিকার রাফাল চুক্তি নিয়ে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছিলেন এবং সরকারের নীতির সমালোচনা করেছিলেন। এই দাবি পার্রিকার পরিবার এবং বিজেপি নেতারা তীব্রভাবে সমালোচনা করেছিলেন, এবং এটিকে প্রয়াত নেতার স্মৃতির প্রতি অসম্মান বলে অভিহিত করা হয়েছিল।
রোহান জেটলি এই ঘটনার উল্লেখ করে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রয়াত নেতাদের নাম রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন।রোহান জেটলির বিবৃতির পর বিজেপি নেতারা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য কেবল রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যের প্রমাণ দেয়।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের মুখপাত্ররা এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, সামাজিক মাধ্যমে কংগ্রেস সমর্থকদের একাংশ রাহুল গান্ধীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, দাবি করে যে তিনি সম্ভবত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের সময়কার অভিজ্ঞতার কথা বলতে চেয়েছেন।
পুজোর অনুদান রোখার চেষ্টা, ফের হাই কোর্টের পথে রাম-বাম জোট
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে রোহান জেটলির প্রতিক্রিয়া ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অরুণ জেটলির মতো একজন প্রয়াত নেতার নামে ভুল তথ্যভিত্তিক দাবি রাজনৈতিক নীতি ও সম্মানের প্রশ্ন তুলেছে। রোহান জেটলির বিবৃতি তাঁর পিতার উত্তরাধিকার রক্ষার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ঘটনা রাজনৈতিক আলোচনায় কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।