কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে প্রতি বছর যে আর্থিক অনুদান দেয় রাজ্য সরকার, তা নিয়ে ফের শুরু হল রাজনৈতিক তরজা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারই ঘোষণা করেছেন, এবছর প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটি ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান পাবে। এই ঘোষণার পরপরই সিপিএম ও বিজেপির পক্ষ থেকে ফের আইনি লড়াইয়ের সুর শোনা গেল।
সিপিএম সাংসদ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য শুক্রবার জানিয়েছেন, তিনি এবছরও এই অনুদানের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে (Calcutta High Court) মামলা করবেন। এদিন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তুলে ধরা হয় ২০২০ সালে দায়ের হওয়া একটি পুরনো জনস্বার্থ মামলার প্রসঙ্গ, যেখানে দুর্গাপুরের বাসিন্দা সৌরভ দত্ত এই সরকারি অনুদানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিকাশরঞ্জন বলেন, “আমি হাই কোর্টে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু জানি, বিশেষ কিছু ফল মিলবে না। মামলার শুনানি চলতেই পুজো এসে যাবে, তার মধ্যে কোর্টে ছুটি পড়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “এই অনুদান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেওয়া হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এ ধরনের আর্থিক সাহায্য প্রশ্ন তুলতে বাধ্য।”
হাই কোর্ট সূত্রে খবর, শুক্রবার আদালতের উল্লেখ পর্বে বিজেপির পক্ষ থেকেও প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এরপরেই মামলার অনুমতি দেয় আদালত। সম্ভবত পুরনো মামলাতেই নতুন করে আবেদন জানিয়ে ফের শুনানির আর্জি জানানো হবে।
যদিও অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, প্রতিবারই হাই কোর্টে মামলার একাধিক শুনানি হলেও এখনও পর্যন্ত আদালত কখনও রাজ্যের পুজো অনুদান বন্ধ করার নির্দেশ দেয়নি। বরং সময়ক্ষেপণেই বিষয়টি ঝুলে থেকে যায়। বিকাশবাবুর মতে, এবারও সম্ভবত একই পরিণতি হবে। তবুও সরকারকে রাজনৈতিক ও নৈতিক অস্বস্তিতে ফেলতেই এই মামলা করা হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রথম দুর্গাপুজো অনুদান চালু করে ২০১৬ সালে। সেই থেকে এই অনুদানের অঙ্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৪৪ হাজারেরও বেশি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি রাজ্যে রয়েছে। সরকার দাবি করে, এই অনুদান রাজ্যের পুজো অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে, পুজোর সময় বহু মানুষের রোজগার হয়, গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ে।
কিন্তু বিরোধীরা বরাবরই অভিযোগ করেছে, এই অনুদানের পেছনে রয়েছে ভোট-রাজনীতির কৌশল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সংবিধানবদ্ধ কাঠামোতে কোনও বিশেষ ধর্মীয় উৎসবের জন্য সরাসরি সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ করা উচিত নয় বলেই তাদের দাবি।
সব মিলিয়ে, দুর্গাপুজো শুরু হতে এখনও কিছুটা সময় বাকি থাকলেও, অনুদান ইস্যুতে রাজনীতির পারদ ফের চড়ছে। রাম-বাম জোটের আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সরকার কতটা অস্বস্তিতে পড়ে, সেটাই এখন দেখার।