ভারতে ডিজিটাল লেনদেনের জনপ্রিয়তম মাধ্যমগুলির একটি হলো UPI (Unified Payments Interface)। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এই পদ্ধতিতে লেনদেন করেন, বিশেষ করে মোবাইল অ্যাপ যেমন Paytm, PhonePe, Google Pay-এর মাধ্যমে। বর্তমান ব্যবস্থায়, UPI লেনদেনের সময় একটি নির্দিষ্ট ৪ অথবা ৬-সংখ্যার পিন কোড দিয়ে অর্থ প্রেরণ বা গ্রহণের অনুমতি নিতে হয়। তবে সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, এই পিনভিত্তিক ব্যবস্থাকে ছেড়ে এবার বায়োমেট্রিক যাচাইকরণের দিকে ঝুঁকছে NPCI (National Payments Corporation of India), অর্থাৎ দেশের UPI নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ কীভাবে কাজ করবে?
Business Standard-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, NPCI এখন এমন একটি ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছে, যেখানে UPI লেনদেনের জন্য ব্যবহারকারীকে আর পিন মনে রাখতে হবে না। বরং মোবাইল ডিভাইসে আগে থেকেই রেজিস্টার করা ফিঙ্গারপ্রিন্ট অথবা ফেস আইডির মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি Android মোবাইল ব্যবহার করেন এবং তাতে আপনার আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত থাকে, তাহলে সেই ছাপ দিয়েই আপনি UPI পেমেন্ট করতে পারবেন, পিন টাইপ করার প্রয়োজন পড়বে না। iPhone ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও ফেস আইডি-র মাধ্যমে একই সুবিধা পাওয়া যাবে।
সুবিধাগুলি কী?
এই প্রস্তাবিত ব্যবস্থার মাধ্যমে একাধিক সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
1. স্মার্টফোনে সহজেই লেনদেন: অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ইতিমধ্যেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি ব্যবহার করে ফোন আনলক করেন। সেই তথ্যকে কাজে লাগিয়েই এবার পেমেন্ট করা সম্ভব হবে।
2. পাসকোড ভুলে যাওয়ার ভয় নেই: অনেক সময় ব্যবহারকারীরা পিন ভুলে যান বা ভুল পিন দিয়ে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে ফেলেন। বায়োমেট্রিকের সাহায্যে সেই সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।
3. সাইবার অপরাধের ঝুঁকি কমবে: ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি নকল করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। ফলে সাধারণ হ্যাকারদের দ্বারা অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
4. দ্রুত এবং নির্বিঘ্ন লেনদেন: সময় বাঁচবে, কারণ প্রতিবার পিন টাইপ করার পরিবর্তে এক টাচেই লেনদেন সম্পন্ন হবে।
কোথায় উদ্বেগ?
তবে এই প্রস্তাবিত পদ্ধতির মধ্যেও কিছু গুরুতর উদ্বেগ রয়ে গেছে, বিশেষ করে মোবাইল চুরি বা হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনার দিক থেকে।
1. মোবাইল চুরি হলে বিপদ: যদি কারও ফোন চুরি হয়ে যায় এবং সেই ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি আগে থেকেই সেভ করা থাকে, তাহলে সেটি ব্যবহার করে লেনদেন করা যেতে পারে। অর্থাৎ, ফোনই হয়ে উঠবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সরাসরি মাধ্যম।
2. অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন: এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে অ্যাপ এবং ব্যাংক উভয়কেই আরও উন্নত স্তরের নিরাপত্তা দিতে হবে। বিশেষ করে, ফোন হারিয়ে গেলে কীভাবে অর্থ পুনরুদ্ধার করা যাবে, তার জন্য নির্দিষ্ট প্রটোকল থাকতে হবে।
3. ডিভাইস নির্ভরতা বাড়বে: এই পরিবর্তনের ফলে একটি নির্দিষ্ট ডিভাইসের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হবে। ফলে ডিভাইস নষ্ট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে লেনদেন সমস্যায় পড়তে পারে ব্যবহারকারী।
কোন কোন অ্যাপ প্রথমে এই ব্যবস্থা আনতে পারে?
ভারতের শীর্ষ UPI অ্যাপগুলির মধ্যে রয়েছে Paytm, Google Pay এবং PhonePe। এই অ্যাপগুলির বেশিরভাগই ইতিমধ্যেই অ্যাপ লক করার জন্য বায়োমেট্রিক স্ক্যানার ব্যবহার করতে দেয়। ফলে NPCI-র পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এই অ্যাপগুলি সহজেই নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
আধার ও বায়োমেট্রিক সংযোগ:
ভারতে অধিকাংশ নাগরিকের আধার কার্ডের সঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যান সংযুক্ত আছে। এই তথ্যের মাধ্যমেও ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও নিরাপদ লেনদেনের রাস্তাও খুলে যেতে পারে। যদিও NPCI-এর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে এই ভাবনার উপস্থিতি স্পষ্ট।
ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানে দেশের অগ্রগতি দিন দিন বাড়ছে। এই অবস্থায় বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ চালু হলে UPI লেনদেন আরও সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ হতে পারে। তবে এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থেকে যায়, বিশেষ করে ফোন চুরি, হ্যাকিং এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিক থেকে।
NPCI যদি সবদিক থেকে চিন্তা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবে এই ব্যবস্থা দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় এক বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ব্যবহারকারীদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে নতুন প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য।