১ আগস্ট ২০২৫, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে উৎসাহ ও প্রত্যাশা তুঙ্গে। এই কমিশনের প্রত্যাশিত পে ম্যাট্রিক্স টেবিল এবং বেতন স্ল্যাব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এই কমিশন গঠনের ঘোষণা করা হয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই কমিশন মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন কাঠামো সংশোধন করবে।
অষ্টম বেতন কমিশনের প্রধান বৈশিষ্ট্য
ইউনিয়ন ক্যাবিনেট ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামো পর্যালোচনা করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অষ্টম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮৩ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে থাকতে পারে, যা বর্তমান সপ্তম বেতন কমিশনের ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে নতুন পে ম্যাট্রিক্স টেবিল তৈরি করা হবে, যা কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রত্যাশিত পে ম্যাট্রিক্স টেবিল ২০২৫
সপ্তম বেতন কমিশনের পে ম্যাট্রিক্স টেবিল ১৮টি স্তর (লেভেল ১ থেকে ১৮) নিয়ে গঠিত, যেখানে প্রতিটি স্তরে কর্মচারীদের পদ এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেতন নির্ধারিত হয়। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য প্রত্যাশিত পে ম্যাট্রিক্স টেবিল এই কাঠামোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে, তবে উচ্চতর ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের কারণে বেতন স্ল্যাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। উদাহরণস্বরূপ, সপ্তম বেতন কমিশনে ন্যূনতম মূল বেতন ছিল ১৮,০০০ টাকা। অষ্টম বেতন কমিশনে এই মূল বেতন ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর অনুযায়ী ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। এছাড়া, উচ্চতর স্তরে (লেভেল ১০-১৮) কর্মচারীদের বেতন ১ লক্ষ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
নীচে অষ্টম বেতন কমিশনের প্রত্যাশিত পে ম্যাট্রিক্স টেবিলের একটি সংক্ষিপ্ত উদাহরণ দেওয়া হল:
লেভেল ১ (এন্ট্রি লেভেল, যেমন পিয়ন, এমটিএস): বর্তমান মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪১,০৪০ টাকা (২.২৮ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর) থেকে ৫১,৪৮০ টাকা (২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর)।
লেভেল ৫ (মিড-লেভেল, যেমন ক্লার্ক, অ্যাসিস্ট্যান্ট): বর্তমান মূল বেতন ২৯,২০০ টাকা থেকে ৬৬,৫৭৬ টাকা থেকে ৮৩,৫১২ টাকা।
লেভেল ১০ (গ্রুপ এ অফিসার, যেমন জুনিয়র অফিসার): বর্তমান মূল বেতন ৫৬,১০০ টাকা থেকে ১,২৭,৯০৮ টাকা থেকে ১,৬০,৪৪৬ টাকা।
লেভেল ১৮ (শীর্ষস্থানীয় অফিসার, যেমন সেক্রেটারি): বর্তমান মূল বেতন ২,৫০,০০০ টাকা থেকে ৫,৭০,০০০ টাকা থেকে ৭,১৫,০০০ টাকা।
এই প্রত্যাশিত বেতন বৃদ্ধি শুধুমাত্র মূল বেতনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং ভাতা যেমন মহার্ঘ ভাতা (ডিএ), গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ), এবং ভ্রমণ ভাতা (টিএ) নতুন মূল বেতনের ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারিত হবে। তবে, অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার পর ডিএ শূন্যে রিসেট হবে, যা প্রাথমিকভাবে কিছুটা কম বেতন বৃদ্ধির প্রভাব ফেলতে পারে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
অষ্টম বেতন কমিশনের ফলে প্রায় ১.৮ লক্ষ কোটি টাকার অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা সরকারের উপর পড়তে পারে। এই বেতন বৃদ্ধি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বাড়িয়ে দেবে, যা শহরাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়াতে পারে। তবে, এর ফলে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাও রয়েছে, যা সরকারকে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বাধ্য করবে। পেনশনভোগীদের জন্যও এই কমিশন গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তম বেতন কমিশনে ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছিল, যা অষ্টম বেতন কমিশনে ২০,৫০০ টাকা থেকে ২৫,৭৪০ টাকায় উন্নীত হতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা এই কমিশনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল, এবং প্রতি দশ বছর অন্তর নতুন বেতন কমিশন গঠনের রীতি অনুযায়ী, অষ্টম বেতন কমিশন ২০২৬ সালে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে, কমিশন গঠন ও সুপারিশ প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ কমিশনের গঠন সম্পন্ন হয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত হতে পারে।
কীভাবে গণনা করবেন নতুন বেতন?
অষ্টম বেতন কমিশনের বেতন গণনার জন্য একটি সরল পদ্ধতি হল ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর দিয়ে বর্তমান মূল বেতন গুণ করা। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও কর্মচারীর বর্তমান মূল বেতন ৫০,০০০ টাকা হয়, তবে ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর অনুযায়ী নতুন মূল বেতন হবে ১,৪৩,০০০ টাকা। এছাড়া, এইচআরএ, টিএ এবং অন্যান্য ভাতা নতুন বেতনের ভিত্তিতে যুক্ত হবে। সরকারি কর্মচারীরা অষ্টম বেতন কমিশনের বেতন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে তাদের প্রত্যাশিত বেতন গণনা করতে পারেন।
অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য একটি নতুন আর্থিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। প্রত্যাশিত পে ম্যাট্রিক্স টেবিল এবং বেতন স্ল্যাবের মাধ্যমে কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে, সরকারকে আর্থিক বোঝা এবং মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ এবং বাস্তবায়নের জন্য সকলের দৃষ্টি এখন সরকারের দিকে।