নতুন অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারতের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য আরও একবার দৃঢ়তার সঙ্গে ধরা দিল। সরকার শুক্রবার, ১ আগস্টে প্রকাশিত তথ্যে জানিয়েছে, জুলাই ২০২৫ মাসে ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (GST Collection) সংগ্রহ ৭.৫ শতাংশ হারে বেড়ে পৌঁছেছে ১,৯৫,৭৩৫ কোটি টাকায়। এটি টানা সপ্তম মাস যেখানে মোট সংগ্রহ ১.৮০ লক্ষ কোটির ওপরে অবস্থান করেছে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের ভোক্তা ব্যয়, করপ্রদানে সচেতনতা এবং সরকারের নীতি-কার্যক্রমে আস্থা প্রকাশ করে। শুধু জুলাই নয়, এপ্রিল-জুলাই ২০২৫ সময়কালে মোট জিএসটি সংগ্রহ পৌঁছেছে ৮,১৮,০০৯ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.৭ শতাংশ বেশি।
এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড:
জিএসটি সংগ্রহে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে এপ্রিল ২০২৫ মাসে, যেখানে মোট সংগ্রহ ছিল ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। বছরের শুরুতেই এত বড় সংগ্রহ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও বৃদ্ধি সূচকের একটি স্পষ্ট প্রতিফলন।
এর আগে, জুলাই ২০২৪-এ জিএসটি সংগ্রহ ছিল ১.৮২ লক্ষ কোটি টাকা এবং জুন ২০২৫-এ তা পৌঁছেছিল ১.৮৪ লক্ষ কোটিতে।
দেশীয় ও আমদানিকৃত করের বৃদ্ধির চিত্র:
জুলাই ২০২৫-এ দেশীয় আয়কর সংগ্রহ ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধির সাথে পৌঁছেছে ১.৪৩ লক্ষ কোটি টাকায়। পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যের উপর কর সংগ্রহও বেড়েছে ৯.৫ শতাংশ হারে, ৫২,৭১২ কোটি টাকায়। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানি উভয়েরই চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন।
রেকর্ড বৃদ্ধি জিএসটি রিফান্ডে:
একদিকে কর সংগ্রহে ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে কর ফেরতের ক্ষেত্রেও সরকার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করেছে। জুলাই ২০২৫-এ জিএসটি রিফান্ড বা কর ফেরতের পরিমাণ পৌঁছেছে ২৭,১৪৭ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৬.৮ শতাংশ বেশি।
এই বিষয়ে EY ইন্ডিয়া-র ট্যাক্স পার্টনার সৌরভ আগরওয়াল বলেন, “বিশ্বব্যাপী কিছু চাপ এবং সাময়িক হ্রাস সত্ত্বেও ভারতের অর্থনৈতিক প্রবণতা স্থিতিশীল ভোক্তা ব্যয় ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। এছাড়া সরকারের সময়মতো রিফান্ড প্রক্রিয়া ব্যবসার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে, কারণ এতে তারা প্রয়োজনীয় কার্যকর মূলধন পেতে পারছে।”
KPMG ইন্ডিয়া-র ইন্ডাইরেক্ট ট্যাক্স প্রধান অভিষেক জৈন মন্তব্য করেন, “জিএসটি রিফান্ড কেবলমাত্র রপ্তানির ক্ষেত্রেই নয়, দেশীয় বিক্রির ক্ষেত্রেও বাড়ছে – যা জিএসটি ব্যবস্থার পরিপক্বতা প্রকাশ করে। দেশে উৎপাদিত পণ্যের ওপর করফেরত সম্ভবত অতিরিক্ত কর প্রদান, ইনভার্টেড ডিউটি স্ট্রাকচার এবং অন্যান্য সমন্বয় থেকে উদ্ভূত। এই বৃদ্ধি ব্যবসার জন্য নগদ প্রবাহে সহায়তা করবে।”
নিট কর আয়েও বৃদ্ধি:
রিফান্ড বাদ দিলে, নিট জিএসটি রাজস্ব জুলাই ২০২৫-এ পৌঁছেছে ১.৬৯ লক্ষ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৭ শতাংশ বেশি। যদিও নিট বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম, তবে স্থিতিশীল রাজস্ব প্রবাহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে তুলছে।
সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি:
বিগত বছরগুলিতে জিএসটি ব্যবস্থার অনেক সমস্যা এবং খামতি চিহ্নিত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিকাঠামো, প্রযুক্তিগত সংহতি ও করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এখন এই ব্যবস্থা অধিক কার্যকর হয়ে উঠেছে। সরকারের তরফে ন্যায্য রিফান্ড প্রদান, স্বয়ংক্রিয় যাচাই ব্যবস্থা, এবং অনলাইন রিটার্ন ফাইলিং-এর উন্নতি জিএসটি সংগ্রহে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের জিএসটি সংগ্রহের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি শুধু রাজস্ব বৃদ্ধির ইঙ্গিত নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তির দৃঢ়তাকেও প্রতিফলিত করে। সময়মতো রিফান্ড, উৎপাদন ও ভোগ বৃদ্ধি, এবং কর ব্যবস্থার পরিপক্বতা আগামী দিনে ভারতের সামগ্রিক আর্থিক উন্নয়নের ভিত্তি হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জিএসটি সংগ্রহের এই ধারা অব্যাহত থাকলে সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অধিক বিনিয়োগ করতে পারবে, যা কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।