মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ভারতের অর্থনীতি মৃত’ মন্তব্যের পর দেশের অর্থনৈতিক (Mahua)পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে বলেন, “বিরোধী দল যখন অর্থনীতির দুরবস্থার কথা বলে, তখন আমাদের ‘দেশদ্রোহী’ বলা হয়।
কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই কথা বলেছেন। আশা করি এবার অন্তত প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এটাকে গুরুত্ব সহকারে নেবেন।” মহুয়া আরও বলেন, “যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন যে ভারত বিশ্ব মঞ্চে গুরুতর খেলোয়াড় নয় এবং শাস্তি হিসেবে শুল্ক ও জরিমানা আরোপ করেন, তখন তা জাতীয় লজ্জার বিষয়।”
মহুয়া মৈত্র তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ভারত বিশ্বব্যাপী সূচকে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে, তা সে প্রেস স্বাধীনতা হোক বা উৎপাদন ক্ষেত্র। তিনি বলেন, “ভারতের অর্থনীতি এখন আইসিইউ-তে রয়েছে। এই সত্য আমরা বারবার বলে এসেছি, কিন্তু আমাদের কথা উপেক্ষা করা হয়েছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর বন্ধু ট্রাম্প যখন একই কথা বলছেন, তখন সরকারের উচিত অর্থনীতির উন্নয়নে জোর দেওয়া।”
তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানান।ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’ এবং রাশিয়ার তেল ও অস্ত্র ক্রয়ের জন্য অজ্ঞাত জরিমানা আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ভারতের তেল আমদানির ৩৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে আসছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নের সমতুল্য। এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে মহুয়া বলেন, “ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভারতের বিশ্ব মঞ্চে মর্যাদার উপরও আঘাত। সরকারের উচিত এই লজ্জা থেকে শিক্ষা নিয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।”
মহুয়া আরও অভিযোগ করেন, মোদী সরকার গত এক দশকে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, “বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, এবং শিল্প উৎপাদনের হ্রাস ভারতের অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে। বিশ্ব সূচকে ভারতের পতন এই ব্যর্থতার প্রমাণ।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যখন আমরা এই সত্য তুলে ধরি, তখন আমাদের দেশবিরোধী বলা হয়।
কিন্তু এবার ট্রাম্পের মুখে একই কথা শুনে কি সরকার জাগবে?”বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে বলেছেন, ভারত তার শক্তি চাহিদা মেটাতে বাজারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে তেল ক্রয় করে। তিনি জানান, ভারত কোনও দেশের চাপে তার সার্বভৌম নীতি পরিবর্তন করবে না।
তবে, মহুয়া এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “শুধু তেল ক্রয়ের নীতি নয়, সরকারকে অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। জনগণের করের টাকা অপচয় না করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শিল্পে বিনিয়োগ করা উচিত।”ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক এবং জরিমানা ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
মহুয়া বলেন, “এই শুল্ক ভারতের রফতানি খাতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। সরকারের উচিত এই সংকট মোকাবিলায় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা।” তিনি আরও দাবি করেন, মোদী সরকারের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ কূটনীতি এখন প্রশ্নের মুখে। “যদি প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুও ভারতের অর্থনীতিকে মৃত বলেন, তবে এটা স্পষ্ট যে আমাদের অর্থনৈতিক নীতি ব্যর্থ হয়েছে,” তিনি যোগ করেন।
মহুয়া মৈত্রের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারাও তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে, বিজেপি এই মন্তব্যকে ‘বিরোধীদের ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির মুখপাত্ররা দাবি করেছেন, ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, এবং ট্রাম্পের মন্তব্য কেবল কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল।
ঘাটাল-আরামবাগের প্লাবিত জনজীবন দেখতে চলতি মাসেই সম্ভাব্য সফর মুখ্যমন্ত্রীর
সামাজিক মাধ্যমে এই ইস্যু নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। অনেকে মহুয়ার বক্তব্যের সমর্থন করে বলছেন, সরকারের উচিত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এবং দেশের অর্থনৈতিক নীতিকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।