শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রী চলাচল সহজ করতে নয়া পদক্ষেপ রেলের

কলকাতা: যাত্রীদের যাতায়াতে আরও শৃঙ্খলা আনতে এবার বড়সড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত শিয়ালদহ স্টেশনে (Sealdah Station) পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে চলেছে ব্যারিকেড-ঘেরা…

Sealdah Station violence

কলকাতা: যাত্রীদের যাতায়াতে আরও শৃঙ্খলা আনতে এবার বড়সড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত শিয়ালদহ স্টেশনে (Sealdah Station) পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে চলেছে ব্যারিকেড-ঘেরা চারটি পৃথক লেন। পাশাপাশি, নির্দিষ্ট শাখাভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ছাড়ারও পরিকল্পনা করছে শিয়ালদহ ডিভিশন। আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যেই এই পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করা হবে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।

প্রতিদিন প্রায় ১৫ লক্ষ যাত্রী শিয়ালদহ স্টেশনে যাতায়াত করেন। উৎসবের সময় সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৮ লক্ষে। এই বিপুল যাত্রীসংখ্যার চাপ সামলাতে এবং যান চলাচলের বিশৃঙ্খলা দূর করতে স্টেশন চত্বরে চারটি পৃথক লেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

   

এই চারটি লেন থাকবে—

বাঁ-দিকে: শুধুমাত্র যাত্রীদের পায়ে চলার জন্য।

তার পাশে: VIP লেন, যেখান দিয়ে ভিআইপিদের গাড়ি ঢুকবে বা বেরোবে।

তৃতীয় লেন: অ্যাপ-ক্যাব যেমন ওলা-উবের-এর জন্য। এই গাড়িগুলি যাত্রীদের স্টেশন থেকে তুলবে বা নামাবে।

ডানদিকের লেন: অটো ও টোটোর জন্য বরাদ্দ।

Advertisements

এই চারটি লেন ব্যারিকেড দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। সফল হলে তা স্থায়ীভাবে বাস্তবায়িত করা হবে।

এছাড়াও, কোলে মার্কেটে যাতায়াতকারী ঠেলাগাড়ি, ট্রলি ও পথচারীদের জন্য একটিমাত্র পৃথক রাস্তা থাকবে। তবে মার্কেট থেকে স্টেশনের দিকে এই রাস্তা দিয়ে ঢোকা যাবে না। তাঁদের প্রবেশ করতে হবে প্রফুল্ল দ্বার দিয়ে, যা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এই দরজাটি পুজোর আগেই সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে এবং সেখানে থাকবে বুকিং কাউন্টার ও পণ্য বুকিংয়ের ব্যবস্থা।

রেল সূত্রের খবর, শুধু স্টেশন চত্বরে লেন বিভাজন নয়, ট্রেন পরিচালনায়ও একই পদ্ধতি চালু করার চিন্তাভাবনা চলছে। যেমন, উত্তর দিকের ট্রেন যেমন বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাটের ট্রেন নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়া হবে। অপর দিকে, দক্ষিণ ও পূর্ব শাখার ট্রেন যেমন রানাঘাট, কল্যাণী, কৃষ্ণনগরের ট্রেন অন্য দিকের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে। এতে যাত্রীরা একবার স্টেশনে ঢুকলেই তাঁদের নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে সহজে পৌঁছে যেতে পারবেন, ঘোরাফেরা করতে হবে না। ফলে যাত্রা হবে ঝকঝকে, ঝামেলামুক্ত।

রেলের অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ট্রেন রুট নির্ভর প্ল্যাটফর্ম পদ্ধতি চালু করতে হলে একাধিক কাঠামোগত বদল আনতে হবে। তাই তা এখনই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু প্ল্যাটফর্মে এই পদ্ধতি চালু করে দেখা হবে কেমন ফল পাওয়া যায়।

রেল আধিকারিকদের মতে, সঠিক লেন ভাগ এবং ট্রেন রুট পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের অসুবিধা অনেকটাই কমবে। ধাক্কাধাক্কি কমবে, ট্রেন মিসের আশঙ্কাও কমবে। কলকাতা পুলিশ ট্রাফিক বিভাগকেও এই পরিকল্পনায় অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের মতামত নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রেল বোর্ড এই উদ্যোগকে একটি ‘মডেল ট্রানজিট ম্যানেজমেন্ট’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যাতে অন্যান্য ব্যস্ত রেল স্টেশনেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় ভবিষ্যতে।