খড়্গপুর: ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর লাগাতার অত্যাচারের ঘটনায় এবার তীব্র প্রতিবাদে সরব হলেন রাজ্যের অবাঙালিরাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ডাকে ৬ আগস্ট ঝাড়গ্রামে যে প্রতিবাদী পদযাত্রা ও সভার আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে শুধু বাঙালিই নন, তেলেগু, গুজরাটি, হিন্দিভাষী-সহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষরাও অংশগ্রহণ করতে চলেছেন। বিশেষ করে খড়্গপুর শহরের অবাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষজন ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
বহু জাতি ও বহু ভাষার একত্রে বসবাসের নিদর্শন হিসেবে খড়্গপুরকে ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বলা হয়। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই শহরে তেলেগু, গুজরাটি, মারাঠি, বিহারি-সহ একাধিক ভাষাভাষী মানুষ বসবাস করছেন। রেলের চাকরির সূত্রে বহু মানুষ এখানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকেই আজ এখানকার স্থায়ী নাগরিক। এখানকার সরকার তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে মর্যাদা দিয়েছে।
খড়্গপুরের অন্যতম বৃহৎ অবাঙালি সম্প্রদায় তেলেগু। অন্ধ্র ইয়ংম্যান অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে, বর্তমানে দেড় লক্ষেরও বেশি তেলেগু মানুষ খড়্গপুরে বসবাস করেন। তাঁদের সন্তানেরা পড়াশোনা করে অন্ধ্র প্রাইমারি ও হাইস্কুলে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অ্যাসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ মেম্বার কে. তারকেশ্বর রাও বলেন, “এই রাজ্য আমাদের ভাষাকেও সম্মান দিয়েছে। সরকার linguistic minority হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা কখনও বঞ্চিত হইনি, বরং নানা অনুষ্ঠানে, শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বত্র সাহায্য পেয়েছি। তাই বাঙালিদের উপর অন্য রাজ্যে অত্যাচারের প্রতিবাদে আমরাও ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় যাব।”
ঠিক একই বক্তব্য গুজরাটি সম্প্রদায়েরও। খড়্গপুরের গুজরাটি ব্যবসায়ী নিমেষ মেহতা বলেন, “আমরা তো পশ্চিমবঙ্গে খুব ভালো আছি। তাহলে অন্য রাজ্যে বাঙালিদের উপর এমন অমানবিক আচরণ কেন? তাই এই প্রতিবাদে আমরা সকলে একসঙ্গে থাকব।”
তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই অবাঙালিদের এই অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়েছে। খড়্গপুর তৃণমূল নেতা প্রদীপ সরকার বলেন, “খড়্গপুর বহু ভাষা ও সংস্কৃতির শহর। এখানকার অবাঙালিরাও বাংলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাঁরা কেউই চুপ থাকতে রাজি নন। মুখ্যমন্ত্রীর এই আন্দোলনে তাঁরাও অংশ নেবেন।”
এই আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ঝাড়গ্রাম হলেও, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি অঞ্চল থেকেও অংশগ্রহণ করবেন তৃণমূল কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রা সফল করতে ইতিমধ্যে বৈঠকও সেরে ফেলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূল নেতৃত্ব। ঝাড়গ্রামের দুলাল মুর্মু, দিবাকর হাঁসদা, পশ্চিম মেদিনীপুরের অজিত মাইতি, সুজয় হাজরা-সহ একাধিক জেলা নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচিকে ঘিরে জনসমাগম বাড়াতে সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। বিশেষ করে অবাঙালিদের উপস্থিতি এই কর্মসূচিকে এক অন্য মাত্রা দেবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। বাংলা ও বাঙালির উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদ গড়াচ্ছে ভাষার গণ্ডি ছাড়িয়ে, তখন খড়্গপুর-সহ রাজ্যের ‘মিনি ইন্ডিয়া’র প্রতিবাদ এক ঐক্যের বার্তাই দিচ্ছে।