মালয়ালী ধর্ম যাজক গ্রেফতারে বিস্ফোরক শশী থারুর

ছত্তিশগড়ে দুই মালয়ালি ধর্ম যাজক গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর (Shashi Tharoor)। তিনি এই গ্রেফতারকে ‘গুরুতর অবিচার’ হিসেবে অভিহিত…

Shashi Tharoor on nun arrest

ছত্তিশগড়ে দুই মালয়ালি ধর্ম যাজক গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর (Shashi Tharoor)। তিনি এই গ্রেফতারকে ‘গুরুতর অবিচার’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “ধর্ম যাজকদের গ্রেফতার একটি গুরুতর অবিচার। তাঁরা কোনও আইন ভঙ্গ করেননি।

তাঁরা শুধুমাত্র কয়েকজন আদিবাসী মেয়েকে কর্মসংস্থানের জন্য শহরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এটি দেখে বজরং দলের সদস্যরা মিথ্যা অভিযোগ তুলে হট্টগোল শুরু করে, এবং পুলিশ এসে ধর্ম যাজকদের গ্রেফতার করে। এটি একেবারেই ঠিক নয়। সবাই যখন এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছে, তবু তাঁরা গত এক সপ্তাহ ধরে জেলে রয়েছেন। বিজেপির কেরল ইউনিট বলছে, তারা ছত্তিশগড়ে গিয়ে তাঁদের জামিনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি।”

   

এই ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি ছত্তিশগড়ের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের অভিযোগ তুলেছে। ২৫ জুলাই দুর্গ রেলওয়ে স্টেশনে দুই নান, প্রীতি মেরি এবং বন্দনা ফ্রান্সিস, এবং আরেকজন ব্যক্তি সুকমান মান্দাভিকে গ্রেফতার করা হয়।

বজরং দলের এক স্থানীয় সদস্যের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে মানব পাচার এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরণের অভিযোগ আনা হয়। তবে, আদিবাসী মেয়েদের পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, মেয়েদের নার্সিং প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জন্য আগ্রায় পাঠানো হচ্ছিল, এবং এতে কোনও জোরজবরদস্তি ছিল না।

শশী থারুর এই ঘটনাকে ‘ভিড়তন্ত্র’ বা জনতার শাসন হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “নির্দোষ মানুষদের কোনও দোষ ছাড়াই জেলে পাঠানো হচ্ছে, আর প্রকৃত অপরাধীরা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ধর্ম যাজকদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত এবং বজরং দলের গুন্ডাদের গ্রেফতার করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা কেরল ও ছত্তিশগড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছে, এবং কংগ্রেস এই অবিচারের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই এই গ্রেফতারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, এটি ‘নারীদের নিরাপত্তার’ সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গুরুতর বিষয়। তিনি এক্স পোস্টে জানিয়েছেন, “নারায়ণপুরের তিন কন্যাকে নার্সিং প্রশিক্ষণ ও চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়েছিল।

তাঁদের দুর্গ স্টেশনে নানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, যাঁরা তাঁদের আগ্রায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। এটি মানব পাচারের মাধ্যমে ধর্মান্তরণের প্রচেষ্টা। এই মামলা বিচারাধীন, এবং আইন তার নিজস্ব পথে চলবে।” তবে, কংগ্রেস নেতারা এই বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে সমালোচনা করেছেন।

Advertisements

এই ঘটনায় কেরলের রাজনৈতিক দলগুলি, যার মধ্যে কংগ্রেস ও সিপিআই(এম)-নেতৃত্বাধীন এলডিএফ রয়েছে, তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা এই গ্রেপ্তারকে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “নানদের অভিযোগ করা হচ্ছে এমন কিছুর জন্য, যা তাঁরা করেননি। তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে এবং পুলিশ তাঁদের নিয়ে গেছে।” কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও এই ঘটনাকে ‘ইচ্ছাকৃত হয়রানি’ বলে সমালোচনা করেছেন।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ভারতের অর্থনীতি মৃত’ মন্তব্যের বিষয়ে শশী থারুর বলেছেন, “এটি একেবারেই সত্য নয়, এবং আমরা সবাই তা জানি।” তিনি ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে খারিজ করে দিয়ে বলেন, ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে এমন মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য।

মরণ-বাঁচন টেস্টে স্বস্তি ভারতীয় শিবিরে! ছিটকে গেলে তারকা ইংলিশ পেশার

এই বিষয়ে রাহুল গান্ধী ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করলেও, থারুর দলের সঙ্গে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অর্থনীতি শক্তিশালী এবং এই ধরনের মন্তব্য ভুল ধারণার জন্ম দেয়।

এই দুটি ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। ধর্ম যাজকদের গ্রেফতারের ঘটনায় কংগ্রেস সংসদে ও সংসদের বাইরে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। শশী থারুর জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং নানদের মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। আগামী দিনে এই ঘটনা কীভাবে সমাধান হয়, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।