একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা কর্ণাটকের ধর্মস্থলা গণকবর রহস্য তদন্তে নতুন মোড় এনেছে (Dharmasthala)। বিশেষ তদন্ত দল (SIT) ধর্মস্থলার নেত্রাবতী নদীর তীরে অবস্থিত একটি কবরস্থানে ৪ ফুট গভীর গর্ত থেকে ২৫টি মানুষের হাড়ের টুকরো উদ্ধার করেছে। এই আবিষ্কার ধর্মস্থলা গণকবর মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
একজন প্রাক্তন স্যানিটেশন কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হওয়া এই তদন্তে এটিই প্রথম সাইট যেখানে শারীরিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারী দাবি করেছেন, তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জোরপূর্বক ১০০টিরও বেশি মৃতদেহ, প্রধানত নারী ও শিশুদের, গোপনে কবর দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকের দেহে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।
এই হাড়গুলি পুরুষের বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তবে ফরেনসিক পরীক্ষার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।ধর্মস্থলা, কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান, দীর্ঘদিন ধরে শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই অভিযোগ এই শান্তিপূর্ণ মন্দির শহরের অন্ধকার দিকটি তুলে ধরেছে।
প্রাক্তন স্যানিটেশন কর্মী, যিনি দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য, জানিয়েছেন যে তিনি মন্দির প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নির্দেশে এই মৃতদেহগুলি কবর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, অনেক মৃতদেহে ধর্ষণ ও হত্যার চিহ্ন ছিল, এবং তাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে এই কাজ করানো হয়েছিল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জুলাই ধর্মস্থলা থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়, এবং ১৯ জুলাই একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়।
২৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া খনন কার্যক্রমে SIT মোট ১৩টি সম্ভাব্য কবরস্থান চিহ্নিত করেছিল, যা অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছিল। প্রথম পাঁচটি সাইটে দুই দিন ধরে খননের পর কোনও মানুষের অবশেষ পাওয়া যায়নি। তবে ৩১ জুলাই ষষ্ঠ সাইটে খননের সময় নেত্রাবতী নদীর স্নানঘাটের কাছে একটি জঙ্গল এলাকায় ৪ ফুট গভীর গর্ত থেকে ২৫টি হাড়ের টুকরো উদ্ধার করা হয়।
এই হাড়গুলির মধ্যে কিছু ভাঙা ছিল, এবং কোনও মাথার খুলি পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন যে এই হাড়গুলি একজন পুরুষের, তবে ডিএনএ বিশ্লেষণ ও ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিশ্চিতকরণ করা হবে।
এই আবিষ্কার ধর্মস্থলার গণকবর রহস্যকে আরও জটিল করেছে। অভিযোগকারী দাবি করেছেন, তিনি এই সাইটে আটটি মৃতদেহ কবর দিয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র আংশিক অবশেষ পাওয়া গেছে। SIT এই সাইটে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিক শিট দিয়ে সাইটটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে, যাতে বৃষ্টির জল বা পরিবেশগত কারণে প্রমাণ নষ্ট না হয়। এছাড়া, কুকুরের স্কোয়াড এবং গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডারের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
এই মামলাটি জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন, তদন্তে কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হবে না। অভিযোগকারীকে সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, এবং তিনি মুখোশ পরে সাইট পরিদর্শন করছেন। এদিকে, ধর্মস্থলা মন্দির প্রশাসন একটি বিবৃতিতে বলেছে, তারা একটি “নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ” তদন্তের সমর্থন করে এবং সত্য প্রকাশের আশা করছে।
তবে, এই তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এস. বালান জানিয়েছেন, ধর্মস্থলায় ৩৬০টিরও বেশি মানুষ নিখোঁজ বা মৃত। তিনি তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়া, মন্দির প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একজনের আত্মীয়ের আবেদনের ভিত্তিতে ৮,৮০০টিরও বেশি মিডিয়া প্রতিবেদন দমনের জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যা বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে।
WB VC Appointments: উপাচার্য নিয়ে দ্বন্দ্বে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে রায় সুপ্রিম কোর্টের
এই ঘটনা ধর্মস্থলার গণকবর রহস্যকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। আগামী দিনে বাকি সাইটগুলির খনন ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ এই মামলার রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।