জ্বালানি ক্ষেত্রে ‘ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব’-এর ঘোষণা করার ঠিক একদিন পরেই পাকিস্তানের পণ্যের উপরে ১৯ শতাংশ শুল্ক চাপাল আমেরিকা (Trump slaps tariffs on Pakistan)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ সম্প্রসারণের আওতায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে চলেছে ৭ অগাস্ট থেকে, ওয়াশিংটন সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে।
বৃহস্পতিবার এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে ঘোষিত এই নতুন শুল্ক নীতির আওতায় বহু দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের উপরে নতুন করে কর ধার্য করা হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আগের ২৯ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে হওয়া একটি বাণিজ্য চুক্তির ফল বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকা-পাকিস্তান জ্বালানি চুক্তি: কী আছে চুক্তিতে?
মঙ্গলবার ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের ‘বিশাল অশোধিত তেলের ভাণ্ডার’ নিয়ে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বর দিকে এগিয়ে যাবে। যদিও ট্রাম্পের উল্লেখিত “ম্যাসিভ অয়েল রিজার্ভ”-এর ভৌগোলিক বিশদ বা বাস্তবতা নিয়ে কোনও স্পষ্টতা এখনো নেই।
চুক্তির আওতায় পাকিস্তান প্রথমবারের মতো আমেরিকার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে সম্মত হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর জ্বালানি নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন।
পাকিস্তানের বৃহত্তম তেল শোধন সংস্থা Cnergyico আগামী অক্টোবর মাসে মার্কিন West Texas Intermediate (WTI) গ্রেডের এক মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করবে বলে সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান উসামা কুরেশি জানিয়েছেন।
ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তানে তেল অনুসন্ধান ও উৎপাদনে নেতৃত্ব দেবে একটি নির্দিষ্ট তেল সংস্থা, যদিও কোনও কোম্পানির নাম বা সময়সীমা এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এমনকি তিনি ভবিষ্যতে পাকিস্তান থেকে ভারতে তেল রফতানির সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন।
নতুন শুল্ক কাঠামো
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো ও আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রূপায়িত হচ্ছে এই নতুন শুল্ক কাঠামো।
নতুন ঘোষণায় ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ, তাইওয়ানের উপর ২০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সের পণ্যের উপর ১৯ শতাংশ কর চাপানো হয়েছে। ভিয়েতনামের পণ্যের ক্ষেত্রে এই হার ২০ শতাংশ।
যেসব দেশ শুল্ক এড়াতে পণ্য পুনঃরপ্তানি বা ট্রান্সশিপমেন্টের আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের উপর অতিরিক্ত কর চাপানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। অন্যদিকে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর মতো কিছু দেশের জন্য পৃথক বাণিজ্য নীতি কার্যকর রয়েছে।
আমেরিকার স্বার্থ অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে দাবি
এই পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদী নীতির ধারাবাহিক অংশ, যেখানে আমেরিকার স্বার্থ অগ্রাধিকার পায় বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও একদিকে ট্রাম্প জ্বালানি অংশীদারিত্বের বার্তা দিচ্ছেন, অন্যদিকে কড়া শুল্ক চাপিয়ে পাকিস্তানের উপরে চাপ বজায় রাখার কৌশলই যেন স্পষ্ট হচ্ছে এই দ্বৈত নীতির মাধ্যমে।
চুক্তি ও শুল্কের এই সমান্তরাল পদক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনাও।