চলতি মাসেই উত্তরবঙ্গ সফরে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সরকারি সূত্রে খবর, আগামী ১৭ থেকে ২১ আগস্টের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এই সফর সম্পন্ন করতে পারেন। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সফরের সম্ভাব্য তারিখের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি জেলায় পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় বার্তা। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে নয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও বহন করছে।
জানা গিয়েছে, ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে পদযাত্রা করতে পারেন। বাংলাভাষী মানুষদের উপর বারবার আক্রমণ ও বঞ্চনার অভিযোগকে সামনে এনে এই মিছিলের মাধ্যমে এক শক্ত বার্তা দিতে পারেন তিনি। এর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করেছেন। এবারও সেই ধারা বজায় রাখার সম্ভাবনা প্রবল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই মিছিলের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের মানুষের সঙ্গে সংযোগ আরও জোরদার করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু শিলিগুড়িই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে সেটা নির্ভর করছে আবহাওয়ার উপর। বর্ষাকাল হওয়ায় পাহাড়ি অঞ্চলে ধস বা খারাপ আবহাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে দার্জিলিং, কালিম্পং বা কার্শিয়াঙে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ে গিয়ে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন, তদারকি করতে পারেন উন্নয়নমূলক কাজকর্মের অগ্রগতি।
এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারেও সফর করতে পারেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেস সম্প্রতি সংগঠন শক্তিশালী করতে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি দলের মনোবল বাড়াতে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন।
উত্তরবঙ্গ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য প্রশাসনিক পর্যালোচনাও হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে পারেন। ‘দুয়ারে সরকার’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘পাড়ায় সমাধান’-এর মতো প্রকল্পগুলি উত্তরবঙ্গে কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে হতে পারে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকাঠামো সংক্রান্ত বিষয়েও কিছু ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রী নতুন কোনও উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনও করতে পারেন বলে সূত্রের দাবি। বিশেষ করে, উত্তরবঙ্গের চা-শ্রমিকদের নিয়ে যেসব সরকারি প্রকল্প চালু হয়েছে, সেগুলির কার্যকারিতা পরখ করতে তিনি কিছু চা-বাগানও পরিদর্শনে যেতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিরই অংশ। উত্তরবঙ্গে গত লোকসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি কিছু জায়গায় ভালো ফল করেছিল। সেই জমি ফের তৃণমূলের দখলে আনতেই এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।