নার্সারি স্কুলের ফি ২ লক্ষ ৫১ হাজার! বেসরকারি স্কুলের ‘বিশেষ পরিষেবা’য় উঠছে প্রশ্ন

শিশুকে নার্সারিতে ভর্তি করাতে বছরে খরচ (Private School Charges) পড়বে আড়াই লক্ষ টাকারও বেশি! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। হায়দরাবাদের (Hyderabad ) এক নামী বেসরকারি স্কুলের বার্ষিক…

Hyderabad Private School Charges ₹2.51 Lakh for Nursery Fees, Sparks Debate on Education Costs

শিশুকে নার্সারিতে ভর্তি করাতে বছরে খরচ (Private School Charges) পড়বে আড়াই লক্ষ টাকারও বেশি! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। হায়দরাবাদের (Hyderabad ) এক নামী বেসরকারি স্কুলের বার্ষিক ফি ২ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা, তাও কেবলমাত্র নার্সারি ক্লাসের জন্য। এই খবর সামনে আসতেই সমাজের বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষা কি তাহলে শুধুই অভিজাত শ্রেণির অধিকার হয়ে যাচ্ছে?

শুধু হায়দরাবাদই নয়, গোটা দেশের বড় শহরগুলিতে এই প্রবণতা এখন বাড়ছে দ্রুত হারে। বেসরকারি স্কুলের অঙ্গনওয়াড়ি ও প্রাথমিক স্তরে ভর্তি ফি, বার্ষিক ফি, ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’, এক্সট্রা কারিকুলার ফি, ট্রান্সপোর্ট, ইউনিফর্ম, বই — সব মিলিয়ে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। শিক্ষা যেন একটি ‘প্যাকেজড কমোডিটি’ হয়ে উঠেছে, যেখানে ‘ব্র্যান্ডেড স্কুলে’ পড়ানো মানে গর্বের বিষয়, অথচ বিপুল খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা।

   

নাগালের বাইরে শিক্ষা খরচ
‘দ্য নিউজ মিনিট’-এর জুন ২০২৫ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, হায়দরাবাদে প্রাইভেট কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বার্ষিক খরচ ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ২ লক্ষ টাকার মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে এই খরচ আরও বেশি। অথচ রাজ্যের শিক্ষা দফতর এখনও পর্যন্ত কোনও সুস্পষ্ট ফি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেনি। ১৯৯০-এর দশক থেকেই অভিভাবকদের তরফে এই দাবি উঠলেও, আজও তা কেবল খসড়া স্তরেই পড়ে রয়েছে।

২০২১-২২ সালের ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (UDISE+) রিপোর্ট অনুযায়ী, শহুরে ভারতে ৪৬ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়ে প্রাইভেট (অনার্থিত) স্কুলে। এর পেছনে অন্যতম কারণ, সরকারি স্কুলগুলির শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার অভাব। ফলে, অভিভাবকদের একাংশ চান সন্তানের ‘ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা’র জন্য খরচ যতই হোক, বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করাতেই হবে।

নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
বেসরকারি স্কুলগুলির উপরে কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। ফলে তারা নিজেদের খুশি মতো ফি ধার্য করে, নানা পরিষেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে। একাধিক রাজ্যে শিক্ষা কমিশন থাকলেও, বাস্তব ক্ষেত্রে তারা খুব বেশি কার্যকর নয়। পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র বা তামিলনাড়ুতে কয়েকটি মামলার ভিত্তিতে আদালতের হস্তক্ষেপে ফি নির্ধারণে কিছু সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার বাস্তবায়ন অনেকটাই দুর্বল।

অর্থনীতির ভাষায় সমাধান কী?
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষানীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়ানোই হতে পারে একমাত্র সমাধান। ২০১৯ সালের একটি বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করলে এবং আরও বেশি স্কুল বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেলে ফি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে। অনেকে বলছেন, সরকারের উচিত নতুন স্কুল খোলার ক্ষেত্রে অনুমোদনের প্রক্রিয়া সরল করে দেওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় বাধা দূর করা, যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে ‘সাপ্লাই সাইড’ বাড়ে।

Advertisements

সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই ধরনের চড়া ফি-র বিরুদ্ধেই সোচ্চার হচ্ছেন অনেক অভিভাবক। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখেছেন, “শিশুর প্রথম পাঠশালার ফি যদি ২.৫১ লক্ষ হয়, তবে উচ্চশিক্ষার খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?” আবার কেউ লিখছেন, “শিক্ষা কি তাহলে শুধু পণ্যে পরিণত হল?” হায়দরাবাদের এক অভিভাবক সংগঠনের সভাপতি বলেন, “শিক্ষাকে যদি সবার জন্য সমান সুযোগ হিসেবে দেখতে চাই, তবে সরকারের উচিত এখনই এই অতি মুনাফালোভী শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনা।”

বর্তমানে ভারতের অনেক শহরে ‘প্রিমিয়াম স্কুল’ একটি নতুন শ্রেণি তৈরি করেছে। যেখানে মান, পরিকাঠামো, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত এবং বিভিন্ন এক্সট্রা অ্যাক্টিভিটির দোহাই দিয়ে লক্ষাধিক টাকা ফি দাবি করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থার ফলে সমাজে আরও একটি নতুন বৈষম্যের রেখা স্পষ্ট হচ্ছে — শিক্ষা নিয়ে।

তাই প্রশ্ন উঠছেই — শিক্ষা কি সত্যিই এখন আর অধিকার নয়, শুধুই সামর্থ্যের বিষয়? এর উত্তর সময়ের অপেক্ষা। তবে রাষ্ট্রের তরফে নিরুত্তর থাকলে ভবিষ্যতের ভারত আরও বৈষম্যপূর্ণ সমাজে রূপান্তরিত হবে, তা বলাই বাহুল্য।