কলকাতা: নাইট শিফটে কাজ করা মহিলা কর্মীদের জন্য সুরক্ষা আরও জোরদার করতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ (Guidelines for Women Employees) নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে একটি খসড়া গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। মূলত আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন এক গাইডলাইনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এবার সেই ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে উদ্যোগ নিল নবান্ন।
এই খসড়া গাইডলাইনে মোট ২২টি গুরুত্বপূর্ণ দিক চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রস্তাবে সাফ বলা হয়েছে, কোনও সংস্থাই কোনও মহিলা কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে রাতের শিফটে কাজ করতে বাধ্য করতে পারবে না। যাঁরা স্বেচ্ছায় নাইট শিফটে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাঁদের লিখিত অনুমতি নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে।
এই নীতির আওতায় তথ্যপ্রযুক্তি, কলসেন্টার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবহণ এবং পুলিশ বিভাগের মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে মহিলারা রাতের শিফটে নিয়মিত কাজ করে থাকেন। নবান্ন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছ থেকে এই গাইডলাইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে পরামর্শও চাওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়কে নাইট শিফট হিসেবে ধরা হবে। সেই সময় কোনও অফিসে যদি মহিলা কর্মীরা কাজ করেন, তাহলে তাদের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক।
বিশেষ করে অফিসে যাতায়াতের সময় যেন কোনওরকম ঝুঁকিতে না পড়তে হয় মহিলা কর্মীদের, সেই কারণে সংস্থার তরফে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকিং থাকবে এবং থাকবেন প্রশিক্ষিত মহিলা নিরাপত্তারক্ষী। পাশাপাশি এমার্জেন্সি অ্যালার্ট সিস্টেমও রাখতে হবে গাড়িতে।
খসড়া নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, নাইট শিফটে কমপক্ষে ১০ জন মহিলা কর্মী অথবা মোট শিফট কর্মীর এক-তৃতীয়াংশ মহিলা কর্মীকে একসঙ্গে রাখতে হবে, যাতে কোনও কর্মী একা না পড়ে যান।
তাঁদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ, ক্যান্টিন এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অফিস প্রাঙ্গণে ঢোকার পথ, এক্সিট রুট এবং করিডর জুড়ে বসাতে হবে সিসিটিভি। সঙ্গে থাকবে “ইন্টারনাল কমপ্লেইন কমিটি”, যেখানে যৌন হেনস্থার অভিযোগ শোনার ব্যবস্থাও থাকবে। গাইডলাইনে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে থাকবে জিরো টলারেন্স পলিসি।
সেই সঙ্গে প্রতিটি সংস্থাকে প্রতি তিন মাস অন্তর একটি “ইন্টারনাল সেফটি রিভিউ” মিটিং করতে হবে, যাতে গাইডলাইনের প্রয়োগ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করা যায়। যদি কোনও সংস্থা এই নির্দেশিকা না মানে, তাহলে শ্রম আইন অনুযায়ী জরিমানা এবং লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অফিসের দৃশ্যমান জায়গায় জরুরি নম্বর ঝোলানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনও বিপদের সময় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। পাশাপাশি কর্মীদের স্থানীয় ভাষায় সেফটি পলিসি বোঝানোর দায়িত্বও সংস্থার। এই গাইডলাইন কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গ নাইট শিফটে মহিলা কর্মীদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষার দিক থেকে দেশের মধ্যে অগ্রণী রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক মহল।