মালদহ জেলার চাঁচল মহকুমার ভাকরি গ্রামে এক নৃশংস খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গোরখপুর গ্রামের যুবক (Migrant worker) নাহারুল আলির মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকেই এই খুন।
নাহারুল আলি ছিলেন একজন পরিযায়ী শ্রমিক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল ২৫ জুলাই। বাড়িতে সেই প্রস্তুতিও চলছিল জোরকদমে। কিন্তু হঠাৎই ২৬ জুলাই সকালে কোনওরকম কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নাহারুল। সঙ্গে কোনও ফোন বা ব্যক্তিগত জিনিস ছিল না। খালি হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় পরিবারের সন্দেহ হয়।
দিন কয়েক কোনও খোঁজ না মেলায় অবশেষে পরিবারের তরফে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। তদন্তে নামে চাঁচল থানার পুলিশ। বাড়িতে পাওয়া নাহারুলের ফোনে ঘাঁটাঘাঁটি করতেই উঠে আসে এক মহিলার নাম, যার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার সঙ্গে নাহারুলের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং সম্ভবত বিয়ের সিদ্ধান্তে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল।
বুধবার সকালে চাঞ্চল্য ছড়ায়, যখন নাহারুলের এক আত্মীয় ভাকরি গ্রামের একটি বাঁশবাগানে তীব্র দুর্গন্ধ পান। সন্দেহ হওয়ায় তিনি আশেপাশে খোঁজখুঁজি শুরু করেন এবং দেখতে পান, একটি রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে মাটিতে। ঘাড়ে মাথা নেই। কাছেই একটি মুণ্ড পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় এবং প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়, এটি নিখোঁজ নাহারুলের দেহ।
স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে মাথা কেটে হত্যা করার মতো ঘটনা এই অঞ্চলে এর আগে কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে, তা নিয়ে এলাকায় নানান জল্পনা।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু ব্যক্তিগত সম্পর্কের একাধিক ইঙ্গিত মিলেছে, তাই ওই মহিলার সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই খুনের রহস্যভেদ করা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ। অন্যদিকে, মৃতের পরিবার এবং গ্রামবাসীরা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছে।
চাঁচল থানার এক আধিকারিক বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা খুনের পিছনে যে সমস্ত সম্ভাব্য মোটিভ থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বের দিকেই ইঙ্গিত মিলছে।”
এই মুহূর্তে গোটা গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ। স্থানীয় প্রশাসন বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করেছে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে।
পুলিশ আশা করছে, খুব শীঘ্রই ধরা পড়বে খুনিরা। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—নাহারুলের মাথা কে কেটে ফেলল? কেবলমাত্র এক তরফা প্রেমের সমাপ্তি কি এই নৃশংসতার কারণ? উত্তর খুঁজছে পুলিশ ও গোটা গ্রাম।