মুম্বই হামলার মূল চক্রীর প্রত্যাবর্তন মনে করিয়ে কংগ্রেসকে কড়া বার্তা জয়শঙ্করের

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর (Jaishankar) সংসদে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। “তাহাউর রানা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন, অবশেষে মোদী সরকারের প্রচেষ্টায় ভারতে ফিরিয়ে আনা…

Jaishankar give answer to congress

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর (Jaishankar) সংসদে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। “তাহাউর রানা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন, অবশেষে মোদী সরকারের প্রচেষ্টায় ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে এই দেশে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।” এই ঘোষণা ভারতের কূটনৈতিক ও আইনি ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তাহাউর রানা, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক। তার প্রত্যর্পণ ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।তাহাওয়ুর রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াতাহাওয়ুর রানা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটক ছিলেন।

   

তিনি ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের কাছে পলাতক ছিলেন। এই হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন ছয়জন আমেরিকান নাগরিক। রানা, লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে, ডেভিড কোলম্যান হেডলির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

হেডলি ভারতে এই হামলার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, এবং রানা তার জন্য লজিস্টিক ও অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদান করেছিলেন।২০২৫ সালের এপ্রিলে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রানার প্রত্যর্পণ বন্ধ করার শেষ আইনি প্রচেষ্টা খারিজ করে দেয়। এরপর ভারতীয় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তাকে দিল্লিতে নিয়ে আসে।

এই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ড. জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এই বিষয়ে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এটি ২৬/১১ হামলার শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একটি বড় পদক্ষেপ।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার এই প্রত্যর্পণকে একটি বড় কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে উদযাপন করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, “তাহাওয়ুর রানার প্রত্যর্পণ মোদী সরকারের জোরালো কূটনীতি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।” এই ঘটনা ভারতের বিশ্ব মঞ্চে ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতিকে তুলে ধরে।

২০১১ সালে, যখন মার্কিন আদালত রানাকে মুম্বই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়, তখন নরেন্দ্র মোদী, তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, তৎকালীন ইউপিএ সরকারের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাহাওয়ুর রানাকে নির্দোষ ঘোষণা করে ভারতের সার্বভৌমত্বের অবমাননা করেছে।” এই পুরনো পোস্টটি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা মোদী সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার প্রতি জনগণের সমর্থন প্রতিফলিত করে।

তাহাউর রানাকে দিল্লির পটিয়ালা হাউস আদালতে হাজির করা হয়েছে, যেখানে এনআইএ তাকে ১৮ দিনের হেফাজতে নিয়েছে। তিনি বর্তমানে দিল্লির সিজিও কমপ্লেক্সে এনআইএর সদর দফতরে একটি উচ্চ নিরাপত্তা সেলে আটক রয়েছেন।

Advertisements

এই মামলার বিচার পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার নেতৃত্বে একটি বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর দল নিয়োগ করেছে। এই দলে রয়েছেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু, সিনিয়র অ্যাডভোকেট দয়ান কৃষ্ণন এবং অ্যাডভোকেট নরেন্দ্র মান।

প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদী এই বিষয়ে বলেছেন, “তিহার জেলে পূর্বে কঠোর অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের আটক করা হয়েছে। তবে, রানার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গুরুত্বের কারণে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন। একাকী উচ্চ নজরদারি, এআই-সহায়ক নজরদারি, এবং সশস্ত্র কনভয়ের মাধ্যমে পরিবহনের মতো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

বিরোধী দল, বিশেষ করে কংগ্রেস, এই প্রত্যর্পণের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “১১ বছর পর তাহাউর রানা অবশেষে ভারতে। এটি কেবল একটি কূটনৈতিক জয় নয়, বরং মোদী সরকারের দীর্ঘ বিলম্বের একটি স্মারক। ইউপিএ সরকার ভিত্তি তৈরি করেছিল, কিন্তু এনডিএ সরকার এটি বাস্তবায়নে এক দশকেরও বেশি সময় নিয়েছে।”

এই মন্তব্যে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সরকারের সমালোচনা করা হলেও, এটি স্পষ্ট যে রানার প্রত্যর্পণ জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাহাওয়ুর রানার প্রত্যর্পণ ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতির একটি শক্তিশালী বার্তা।

এটি ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গভীরতা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রতিফলন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নিকোল নাভাস অক্সম্যান বলেছেন, “রানার প্রত্যর্পণ ছয় আমেরিকান সহ ১৬৬ জন শিকারের জন্য ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

এই ঘটনা ভারতের কূটনৈতিক ক্ষমতা এবং বিশ্ব মঞ্চে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। তবে, পাকিস্তানে এখনও অনেক জঙ্গি নেতা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষায় রয়েছেন। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বলেছেন, “একদিন তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে।” তাহাওয়ুর রানার প্রত্যর্পণ এবং বিচার ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

বিয়ে ঠিক হতেই উধাও পরিযায়ী শ্রমিক, উদ্ধার মুণ্ডহীন দেহ

এটি কেবল ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে একটি পদক্ষেপ নয়, বরং ভারতের কূটনৈতিক শক্তি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের প্রমাণ। মোদী সরকারের নেতৃত্বে এই সাফল্য ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা নীতির একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।