কলকাতা: শহরের অন্যতম ব্যস্ত মেট্রো স্টেশন নিউ গড়িয়া বা কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের (Kavi Subhash Metro Station) ভবিষ্যৎ এখন বড়সড় প্রশ্নের মুখে। কারণ, মাত্র ১৫ বছরেই এই মেট্রো স্টেশনে দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল। ইতিমধ্যেই সোমবার দুপুর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই স্টেশনের পরিষেবা। ব্লু লাইন মেট্রোর চলাচল আপাতত সীমাবদ্ধ দক্ষিণেশ্বর থেকে ব্রিজি স্টেশন পর্যন্ত।
মেট্রো রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেশনের ১১, ১৬, ১৭ এবং ২০ নম্বর পিলার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক ফাটল ধরা পড়েছে আপ লাইনের বিভিন্ন অংশে। প্ল্যাটফর্মের ছাদ ও জমির সংযোগস্থলেও ফাটলের প্রমাণ মিলেছে। এর জেরে স্টেশনটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মেট্রোর তরফে অনলাইনে টেন্ডার ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণ পুনর্নির্মাণের কাজ চলবে অন্তত এক বছর।
উল্লেখযোগ্য, ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর নিউ গড়িয়া মেট্রো স্টেশন বা কবি সুভাষ স্টেশনের উদ্বোধন হয়েছিল। সে তুলনায় মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই এমন সংকট দেখা দেওয়া মেট্রো রেলের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শহরের বহু পুরনো মাটির নিচের স্টেশন যেখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে কার্যকর, সেখানে নতুন ও ওভারগ্রাউন্ড স্টেশনে এমন বিপর্যয় কিভাবে ঘটল, তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে শহরবাসীর।
এই স্টেশন থেকে বহু যাত্রী দক্ষিণ শাখার শিয়ালদহের ট্রেন ধরেন। ফলে এই স্টেশন বন্ধ হওয়ায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। অন্যদিকে ব্লু লাইনের দৈনন্দিন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় শহরের দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার একটা বড় অংশের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মেট্রো রেলের প্রাথমিক দাবি, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেই পিলারে ফাটল ধরেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক পার্থ প্রতিম বিশ্বাস জানিয়েছেন, “এই ধরনের ফাটল সাধারণত মরচে পড়া বা নির্মাণজনিত দুর্বলতার ফলে হয়। এটা একদিনে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এই অবস্থা।”
তিনি আরও জানান, কবি সুভাষ স্টেশন এলাকা এক সময় জলাভূমি ছিল। ফলে নরম মাটির উপর নির্মিত পিলার যথেষ্ট মজবুত না হলে ফাটল ধরার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
এই প্রথম নয়। গত মাসেই পার্ক স্ট্রিট, চাঁদনি চক এবং সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনেও দেখা গিয়েছে জল ঢোকার ঘটনা। এমনকি কবি নজরুল স্টেশনের ছাদের শেড ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল। এইসব ঘটনা কলকাতা মেট্রোর পরিকাঠামোর স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা জাগিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত কবি সুভাষ স্টেশন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। স্টেশন ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে এক বছরের সময় লাগবে। কিন্তু এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে—নিয়মিত ‘হেলথ মনিটরিং’ ব্যবস্থা থাকলে কি এমন ঘটনা ঘটত?
কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের এই বিপর্যয় কলকাতা মেট্রো রেলের প্রতি মানুষের আস্থা নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যে পরিষেবার উপর নির্ভর করেন, তার গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ যদি এত দুর্বল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়।