স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন অব ইলেক্টোরাল রোল’, সংক্ষেপে ‘সার’— নির্বাচন কমিশনের এই বিশেষ পর্যালোচনা প্রক্রিয়া নিয়ে এবার কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বাংলার কোনও বৈধ ভোটারের নাম যদি এই ‘সার’ পর্যায়ে বাদ পড়ে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সরব হবে সরকার ও দল। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার ঘটনা মানা হবে না। প্রয়োজনে প্রতিবাদের দামামা বাজানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “কোনও নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। কেউ যদি তালিকাভুক্ত হয়ে থাকে, তাকে অবৈধ ভাবে বাদ দেওয়া যায় না। কেউ যদি ভুলবশত বাদ পড়ে যায়, তাহলে তার সংশোধনের সুযোগ থাকতে হবে।” তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, ১৮ বছর বয়স সম্পূর্ণ হলেই যেন প্রত্যেকে নিজের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তা নিয়মিত খতিয়ে দেখেন।
‘সার’ প্রক্রিয়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন, তবে এই বিশেষ রিভিশনের সময় সাধারণত ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করা হয়, নতুন ভোটারদের নাম তোলা হয় এবং অকার্যকর বা মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের। ভোটার তালিকার সংশোধনের আবেদন বা আপত্তি গ্রহণ, যাচাই ও প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব তাঁদেরই।
সেই প্রসঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে, যাঁরা এই সার প্রক্রিয়ায় বিএলও হিসেবে নিযুক্ত হবেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “বিএলও-রা যেন ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় কোনও সাধারণ মানুষকে হেনস্থা না করেন। তাঁদের উপর মানুষ ভরসা রাখেন। তাই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “কাউকে ভয় দেখিয়ে বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হলে, সরকার চুপ থাকবে না। যারা এই কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তাঁর কথায় উঠে এসেছে অতীতের প্রসঙ্গও। “আমি জানি, আগের বার অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছিল— কারও নাম নেই, কেউ বাদ পড়েছে। এবার কিন্তু এমনটা বরদাস্ত করা হবে না। একটাও বৈধ ভোটার নাম থেকে বাদ গেলে আমরা তার বিরুদ্ধে জবাব চাইব।” তিনি সবাইকে জানান, কারও নাম তালিকায় না-থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সেই সংক্রান্ত অভিযোগ স্থানীয় বিএলও-র কাছে জানাতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যাখ্যা চাইতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির নেপথ্যে রয়েছে আগামী বছরের (২০২৬) বিধানসভা ভোট এবং তার আগেই সম্ভবত একটি লোকসভা নির্বাচন। এই সময়ে রাজ্যে ভোটার তালিকা থেকে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রে বৈধ ভোটারদের বাদ দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী আগেভাগেই সক্রিয় হয়েছেন। তাঁর বার্তা, “মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করাই সরকারের কর্তব্য।”
শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান, “আপনারা সকলে নিজেদের নাম তালিকায় আছে কি না, দেখে নিন। যাঁরা এখনও নাম তোলেননি, তাঁরা যেন আবেদন করেন। গণতন্ত্র বাঁচাতে, অধিকার রক্ষা করতে সচেতন নাগরিক হিসেবে সক্রিয় হতে হবে।”
এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়েছে। শাসকদলের কৌশলগত বার্তা স্পষ্ট— রাজ্যে ভোটার তালিকা নিয়ে কোনওরকম ‘রাজনৈতিক খেলা’ বরদাস্ত করা হবে না।