লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার সময় একটি উল্লেখযোগ্য বক্তব্য রেখেছেন, যেখানে তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা প্রধান (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহানের প্রশংসা করেছেন, কিন্তু একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর তীব্র সমালোচনা করেছেন।
রাহুল গান্ধী বলেন, “আমি সিডিএস অনিল চৌহান জিকে বলতে চাই, আপনি কোনও কৌশলগত ভুল করেননি। ভারতীয় বিমান বাহিনীও কোনও ভুল করেনি। ভুল করেছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যারা বলেছিল যে আপনারা সামরিক পরিকাঠামোর উপর আক্রমণ করতে পারবেন না।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে রাহুল গান্ধী স্পষ্টভাবে সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন তুলেছেন।
আজ লোকসভায় অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার সময় রাহুল গান্ধী পহেলগাঁও জঙ্গি হামলাকে পাকিস্তানের দ্বারা সংঘটিত একটি “নৃশংস আক্রমণ” হিসেবে নিন্দা করেন। তিনি বলেন, অপারেশন শুরু হওয়ার আগেই বিরোধী দল সরকারকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর অভিযোগ তুলে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত ছিল।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন ১টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তান সরকারকে বলা হল যে আমরা সামরিক পরিকাঠামো এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর আক্রমণ করব না এবং আমরা উত্তেজনা বাড়াতে চাই না?” তিনি এই সিদ্ধান্তকে “আত্মসমর্পণ” এবং “রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব” হিসেবে বর্ণনা করেন।
রাহুল গান্ধী আরও অভিযোগ করেন যে, এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় বিমান বাহিনীকে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের পাইলটদের হাত বাঁধা ছিল। ফলস্বরূপ, আমরা কিছু বিমান হারিয়েছি।” তিনি সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তাঁর হাত পিঠের পিছনে বাঁধা ছিল।”
রাহুল দাবি করেন, সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ছিল “প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষা করা”। তিনি ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশের বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলটদের পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে রাহুল গান্ধী সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি তাঁর সমর্থন প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত পেশাদার এবং তারা কোনও ভুল করেনি।” তিনি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে একটি বড় ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা অপারেশন সিঁদুরের প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে দুর্বল করেছে।
অপারেশন সিঁদুর ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া, যা ২০২৫ সালের ৭ মে শুরু হয়েছিল। এটি পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চালানো হয়, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছিল।
সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহান সিঙ্গাপুরের শাংরি-লা ডায়ালগে স্বীকার করেছেন যে, ৭ মে প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত কিছু বিমান হারিয়েছিল, তবে তিনি পাকিস্তানের দাবি—যে তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে—তা “সম্পূর্ণ ভুল” বলে প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিমান হারানো নয়, বরং কেন হারানো হয়েছিল এবং তারপর আমরা কী করেছি।” তিনি আরও জানান, ভারত দ্রুত কৌশলগত ভুল সংশোধন করে ৮ এবং ১০ মে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিতে নির্ভুল আক্রমণ চালিয়েছিল।
রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেস সমর্থকরা তাঁর এই বক্তব্যকে সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একাধিক এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “গলতি বায়ুসেনার নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের।” তবে, সরকারের সমর্থকরা এই বক্তব্যকে সামরিক বাহিনীর মনোবল ভাঙার প্রচেষ্টা হিসেবে সমালোচনা করেছেন।
রাহুল গান্ধীর এই বক্তৃতা ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। তিনি সংসদে স্পষ্টভাবে সেনা প্রধান এবং বিমান বাহিনীর পক্ষে কথা বলেছেন, কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে আরও স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন।
‘ডগ বাবু’ কাণ্ডে সক্রিয় তদন্তের আশ্বাস জেলা প্রশাসকের
এই ঘটনা ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন, যাতে অপারেশন সিঁদুরের বিস্তারিত আলোচনা করা যায়। ভক্তরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, সরকার এই সমালোচনার কী জবাব দেয় এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হবে।