কলকাতা: যা গত পাঁচ বছরে হয়নি, তা এবার ঘটে গেল। জুলাই মাসে প্রবল বর্ষণে (Heavy Rainfall) ভিজে ছারখার হয়ে গেল গোটা দক্ষিণবঙ্গ। কলকাতা থেকে পশ্চিমাঞ্চল— সর্বত্রই বৃষ্টির দাপট। আর এই বৃষ্টিপাতেই ২০২৫ সালের জুলাই মাসে বিগত পাঁচ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল।
আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসে কলকাতায় বৃষ্টিপাত কিছুটা কম থাকলেও জুলাই মাসে বৃষ্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৫৯৩.৬ মিলিমিটার। যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৩৬২ মিলিমিটার হওয়ার কথা, সেখানে এই পরিমাণ ৬৪ শতাংশ বেশি। গত বছর জুলাই মাসে এই পরিমাণ ছিল ৩২৮.৪ মিলিমিটার। অর্থাৎ এবছর কলকাতার মানুষ একপ্রকার ‘জলবন্দি’ অবস্থায় দিন কাটালেন।
শুধু কলকাতা নয়, গোটা দক্ষিণবঙ্গেই দেখা গিয়েছে একই চিত্র। ১ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে মোট ৬৮০.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক হিসেবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল ৫৭১.৮ মিলিমিটার। ফলে দক্ষিণবঙ্গে ১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বিশেষ করে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে অতিমাত্রায়। নদী, খাল ও জলাশয় উপচে পড়েছে। মাঠে জল জমে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বহু অঞ্চলে।
তবে এই সময়েই সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গে। পরিসংখ্যান বলছে, উত্তরবঙ্গে বর্ষার সময় মোট ৭১০.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক হিসেবে হওয়া উচিত ছিল ১০০৫.৩ মিলিমিটার। শতাংশের বিচারে প্রায় ২৯ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গে। মালদহ, কালিম্পং, দক্ষিণ দিনাজপুর সহ একাধিক জেলায় এই ঘাটতি প্রকট।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ব্যারাকপুরে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় হালকা থেকে মাঝারি এবং কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং কলকাতার কিছু অংশে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দু’দিন দক্ষিণবঙ্গে হালকা, মাঝারি ও কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং দুই ২৪ পরগনায়।
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে আগামী চার দিনে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলবে। ১ অগাস্ট থেকে ৪ অগাস্ট পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমী বায়ু উত্তরের দিকে সরার ফলে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাত বাড়বে এবং দক্ষিণবঙ্গে তা কিছুটা কমে আসবে। তবে এখনই স্বস্তির আশা নেই। দক্ষিণবঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ রেখা সক্রিয় থাকায় পরবর্তী কয়েকদিনও বৃষ্টির দাপট অব্যাহত থাকবে।