স্কুল শিক্ষায় স্থানীয় ভাষার গুরুত্ব বাড়াতে আরও এক বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। সাঁওতালি ভাষার পর এ বার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কুড়মালি ভাষায় পঠন-পাঠন (Kurmalí Language Education) চালু করার ভাবনা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল শিক্ষা দফতর। মূলত ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর — এই চার কুর্মি অধ্যুষিত জেলাতেই প্রাথমিক স্তরে এই ভাষায় পড়াশোনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কুড়মালি ভাষা চালু করার জন্য ইতিমধ্যেই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। ওই কমিটিতে থাকবেন কুড়মালি জানা শিক্ষক, ভাষাবিদ ও অনুবাদকরা, যাঁরা সিলেবাস তৈরিতে সহায়তা করবেন। এর আগে অলচিকি হরফে সাঁওতালি ভাষায় পাঠ্যক্রম চালু করার পরে এই উদ্যোগ রাজ্যের ভাষা বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে একটি বড় দৃষ্টান্ত হতে চলেছে।
২০১৯ সালে কুড়মি সম্প্রদায়ের তরফে ভাষাটিকে সংবিধানের অষ্টম তপশিলভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্থানীয় ভাষায় শিক্ষাদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনার পরই কুড়মালি ভাষাভাষী মানুষেরা স্কুলে মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের অধীন ল্যাঙ্গুয়েস্টিক মাইনরিটিজ কমিশনের কাছে একাধিকবার আবেদন জানান। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পত্র প্রেরণ করা হয়।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্তরে কুড়মালি ভাষাকে শিক্ষার ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে একটি সদর্থক ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। এরপর রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর সংশ্লিষ্ট চার জেলায় কত কুড়মালি ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রী রয়েছে, কোন কোন স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা কত— সেই তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে। চার জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শকরা ইতিমধ্যেই এই তথ্য সংগ্রহে নেমে পড়েছেন।
রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের মতামত পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে নবান্নের তরফে। ওই দফতরের সম্মতি পেলে পরবর্তী প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ার সিধো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঝাড়গ্রামের রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে কুড়মালি ভাষা নিয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে সেখানে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রী ও গবেষকরা এই উদ্যোগে সহায়ক ভূমিকা নিতে পারেন।
কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বহু বছর ধরে এই ভাষায় পঠন-পাঠনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। সম্প্রদায়ের একাধিক সংগঠন ও ভাষা কর্মী ইতিমধ্যেই সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দ্রুত রূপায়ণের দাবি জানিয়েছেন।
স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, “আমরা চাই ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিখতে পারে। তাতে শেখার প্রতি আগ্রহও বাড়ে। এই লক্ষ্যেই আমরা কুড়মালি ভাষায় প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার পথে হাঁটছি।”
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গের ভাষাগত বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হবে বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।