পরিযায়ী বাঙালিদের পাশে রাজ্য সরকার, বড় সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর

ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর একের পর এক হেনস্তার ঘটনার খবর মিলছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রুজি-রুটির সন্ধানে বেরনো এই…

Haryana CM Nayab Saini Attacks West Bengal CM Mamata Banerjee Over Bangladeshi Infiltration, Accuses Her of Playing with National Security

ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর একের পর এক হেনস্তার ঘটনার খবর মিলছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রুজি-রুটির সন্ধানে বেরনো এই শ্রমিকেরা আজ নানা ভাবে নিগৃহীত, অবহেলিত। কোনও জায়গায় তাঁদের মারধর করা হচ্ছে, কোথাও তাঁরা পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরি, তো কোথাও আবার জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন দিনের পর দিন। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে কড়া বার্তা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন, “বাইরের রাজ্যে আমাদের ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা প্রতিদিন অপমানিত হচ্ছেন। বাংলার লোকজনকে রাস্তায় মারধর করা হচ্ছে। এবার তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে আনুন। বাংলার মাটিতেই কাজের সুযোগ করে দেব।”

   

পরিযায়ী ফেরানো নিয়ে প্রশাসনকে স্পষ্ট নির্দেশ

এই মন্তব্য শুধু আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে প্রশাসনিক স্তরের কড়া বার্তা। মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট জানান, সব জেলা শাসকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই শ্রমিকদের ফেরানোর রূপরেখা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, “জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করুন। কোন জেলায় কতজন পরিযায়ী রয়েছেন, সেটা খতিয়ে দেখুন। তাঁরা কোথায় কাজ করছেন, কী অবস্থায় আছেন— সব তথ্য জোগাড় করুন। তার পর আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করব।”

হেনস্তার বিরুদ্ধে সরব মমতা

সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে এক বাঙালি পরিবারকে নিগ্রহের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। সে সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন, “আমার বাঙালিদের হেনস্তা সহ্য করব না। দেশটা বিজেপির একার নয়।” সেই সুরেই এবার প্রশাসনিক স্তরে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হল।

মমতা এদিন বলেন, “বাংলার ছেলে-মেয়েরা বাইরে গিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এটা আমি আর মেনে নিতে পারছি না। বাংলার মাটিতেই কাজের সুযোগ থাকবে। যাতে কেউ আর বাইরে না যেতে বাধ্য হন।” তিনি জানান, রাজ্যে আরও নতুন প্রকল্প, শিল্প এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে যাতে এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘরে ফিরে উপার্জনের পথ খুঁজে পান।

কী বলছে পরিসংখ্যান?

Advertisements

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলার প্রায় ২২ লক্ষ মানুষ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। মূলত মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কেরল, দিল্লি, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব ও রাজস্থান— এই রাজ্যগুলিতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কাজ করেন বাংলার শ্রমিকরা। করোনা অতিমারির সময় এঁদের একটা বড় অংশ ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই আবার কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হন।

রাজ্যের পরিকল্পনা

পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে এনে তাঁদের জীবিকা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর ইতিমধ্যেই একাধিক প্রকল্প ও কর্মসূচির কথা ভাবছে। রাজ্যে নতুন করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ, হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান তৈরির দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন।

রাজনৈতিক বার্তা

এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধারে মানবিকতার বার্তা দিলেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক দিক থেকেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রশ্ন তুলে ফের আবেগের রাজনীতিতে ফিরছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে শুধু আবেগ নয়, এবার প্রশাসনিক কর্মপন্থা নিয়েই মাঠে নামছেন তিনি।

এই উদ্যোগ আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে সময়ই বলবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে বাংলার হাজার হাজার পরিযায়ী পরিবারকে এক নতুন আশার আলো দেখাল।