‘বাংলায় গণতন্ত্র বিপন্ন’, কমিশনে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন শুভেন্দু

বাংলার ভোটার তালিকায় বেআইনি ভাবে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম তোলা হচ্ছে—এই মর্মে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিলেন রাজ্য বিধানসভার…

Suvendu on rohinga issue

বাংলার ভোটার তালিকায় বেআইনি ভাবে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম তোলা হচ্ছে—এই মর্মে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে এই অনিয়ম চলছে এবং এর পেছনে রয়েছে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

চিঠিতে শুভেন্দু লিখেছেন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অস্বাভাবিক হারে ভোটার ফর্ম জমা পড়েছে। তিনি দাবি করেন, “সাধারণত এই সময়ে ওইসব এলাকায় ২০-২৫ হাজার নতুন ভোটার ফর্ম জমা পড়ে। কিন্তু গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই ৭০ হাজারের বেশি ফর্ম জমা পড়েছে। এটা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক এবং এর পেছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে।”

   

বিরোধী দলনেতার দাবি, রাজ্য প্রশাসনের একাংশ রাজনৈতিক চাপে পড়ে বেআইনি নাগরিকদের বৈধ নাগরিক প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এই বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের ডোমিসাইল সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এরফলে আসন্ন নির্বাচনগুলিতে ভুয়ো ভোটারদের ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করা যাবে।”

চিঠিতে শুভেন্দু এই ঘটনাকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এর ফলে সন্ত্রাসবাদ, জাল টাকার চক্র, মানব পাচার এবং মাদক পাচার বাড়বে। তাঁর কথায়, “বাংলার ভবিষ্যৎ বিপদের মুখে। অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।”

এছাড়াও তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, রাজ্যের সমস্ত সীমান্তবর্তী জেলায় বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ভোটার ফর্ম যাচাই করা হোক। সেইসঙ্গে ডোমিসাইল ও জন্মশংসাপত্র যাঁরা দিচ্ছেন, সেই সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও তদন্ত দাবি করেছেন শুভেন্দু।

চিঠির একটি কপি তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং রাষ্ট্রপতিকে পাঠিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।

Advertisements

এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যদিও এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আগামী দিনে এই ইস্যুকে সামনে রেখেই বিজেপি রাজ্যে আরও জোরালো প্রচারে নামতে পারে।

উল্লেখযোগ্য, বিগত কয়েক বছর ধরেই বিজেপির তরফে বারবার এই অভিযোগ তোলা হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করছে এবং রাজ্য প্রশাসনের সহায়তায় তারা নাগরিকত্বের নথিপত্র জোগাড় করছে। যদিও শাসক দল তৃণমূল বরাবরই এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

এবার সেই পুরোনো অভিযোগকে আরও জোরদারভাবে তুলে ধরে শুভেন্দু অধিকারীর সরাসরি নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়া রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়াবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

চিঠির প্রতিলিপি সামনে আসতেই এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও তীব্র চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তে নামতে হবে।

এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন শুভেন্দুর এই দাবিকে কতটা গুরুত্ব দেয় এবং কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়। তবে আপাতত বিরোধী দলনেতার এই চিঠি রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।