২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সোনার বাজার এক অভাবনীয় চিত্র তুলে ধরেছে। সোনার দামের যে ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেখা গিয়েছে, তা সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। জুলাই মাসেই ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম পৌঁছেছে ১ লাখ ৫৫৫ টাকায়। এমন মূল্যবৃদ্ধি বিগত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। ফলে আগামী আগস্টে সোনার দাম আরও বৃদ্ধি পাবে, এমন অনুমান অমূলক নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা এবং ভারত ও চিনের মতো বড় অর্থনীতির দেশে সোনার উপর বাড়তি নির্ভরতা এই দামের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম প্রধান কারণ। গ্লোবাল মার্কেটে যখন মার্কিন ডলার দুর্বল হয় বা মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়ে, তখন সোনাকে ‘সেফ হ্যাভেন’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে লগ্নিকারীরা শেয়ার, বন্ড বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের থেকে পিছু হটে সোনার দিকে ঝোঁকে। এই প্রবণতা ২০২৫ সালে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের ভূমিকাই বা কী?
ভারত ঐতিহাসিকভাবেই সোনার বড় বাজার। বিবাহ, উৎসব, সামাজিক অনুষ্ঠান—সব ক্ষেত্রেই সোনার চাহিদা বরাবরই তুঙ্গে। চলতি বছর ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও সোনার মজুত বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণ ভাণ্ডারও বাড়িয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক আর্থিক অস্থিরতার সময় এই সম্পদ সুরক্ষা দিতে পারে।
এছাড়া ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে সোনা এখন শুধু অলংকার হিসেবে নয়, বরং এক বিকল্প বিনিয়োগ হিসেবেও ধরা হচ্ছে। গোল্ড ইটিএফ, ডিজিটাল গোল্ড বা সোনার বন্ডের মাধ্যমে এখন বহু মানুষ নিয়মিত সোনা কেনায় অভ্যস্ত হয়েছেন। ফলে বাজারে চাহিদা আরও বাড়ছে, যা সরাসরি দামের উপর প্রভাব ফেলছে।
চিন এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি
চিনের ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিগত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে সোনা কেনার দিকে মন দিয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক চাপ, ডলার নির্ভরতা কমানোর কৌশল এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সোনাকে অন্যতম প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে চিন।
এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকট, আমেরিকা-চিন বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি—এই সবকিছু মিলিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে। আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সোনার দামে।
কোথায় গিয়ে থামবে এই ঊর্ধ্বগতি?
যদি বর্তমান পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে এবং চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান আরও বাড়তে থাকে, তাহলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সোনার দাম ১০ গ্রামে ১.৪৫ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকায় পৌঁছে যেতেও পারে। অনেক বিশ্লেষক তো বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি বড় ধরনের সংকট দেখা দেয়, তবে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
সাধারণ মানুষের প্রভাব
এমন দাম বৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সোনা ক্রয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বিয়ের মরশুমে বা উৎসবের সময় অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন কম সোনা কিনতে বা একেবারেই না কিনতে। এর ফলে দেশীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের উপরও চাপ পড়ছে।