নয়াদিল্লি: অপারেশন সিঁদুর ঘিরে সোমবার লোকসভায় শুরু হচ্ছে ১৬ ঘণ্টার উত্তপ্ত অধিবেশন। কেন্দ্রকে আক্রমণের অন্যতম সুযোগ হিসেবে এই আলোচনাকে ব্যবহার করতে মরিয়া কংগ্রেস। কিন্তু তার আগেই জোটের অভ্যন্তরেই ভিন্ন সুরে কাঁপন ধরেছে ইন্ডিয়া ব্লকের কৌশলে (Operation Sindoor INDIA Bloc Strategy)। এই অবস্থায় সংসদে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিশ্চিত করতে জরুরি বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলের সংসদীয় নেতারা।
একই জোটে একাধিক মুখ? কৌশলগত দোলাচলে ইন্ডিয়া
কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকে জানিয়েছেন, সোমবার লোকসভায় চলবে ১৬ ঘণ্টার বিশেষ অধিবেশন, যার বড় অংশজুড়ে থাকবে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা। কংগ্রেস চাইছে, এই সামরিক অভিযানের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা, জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গ এবং মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি, সব কিছু মিলিয়ে কেন্দ্রকে কোণঠাসা করতে।
কিন্তু সমস্যা হল, কংগ্রেস যেখানে জাতীয় নিরাপত্তার এই ইস্যুতেই ফোকাস রাখতে চাইছে, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস এবং আরজেডি-র মতো আঞ্চলিক শরিকরা অধিবেশনে নিজেদের অবস্থান স্থাপন করতে চাইছে SIR (State-wise Integrated Roll) বা ভোটার সমীক্ষা নিয়ে। বিহারে সম্প্রতি হওয়া বিতর্কিত সমীক্ষা এবং বাংলায় সম্ভাব্য আগাম সমীক্ষা, এই দুই রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ানো ইস্যু নিয়েই বেশি আগ্রহ তাদের।
ফলে সংসদে একমুখী আক্রমণের পরিবর্তে ইস্যু বিভাজন দেখা দিতে পারে বিরোধী জোটের মধ্যে—এবং সেটাই আশঙ্কার কারণ কংগ্রেসের কাছে। সংসদের ময়দানে সরকারকে শক্তিশালী ভাবে চেপে ধরতে এই বিভাজন যেন অন্তরায় না হয়, তা নিশ্চিত করতেই বৈঠকে বসছে ইন্ডিয়া জোট।
এসআইআর ইস্যুতে ফাঁদ পাতছে আঞ্চলিক দলগুলি
যদিও কংগ্রেস এসআইআর ইস্যুকে সরাসরি খারিজ করছে না। বরং সূত্রের খবর, সদ্য অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকেও এই বিষয়ে জোর দিয়ে কথা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, সংসদ চত্বরে সোমবার সকাল দশটা নাগাদ বিরোধী দলগুলি যৌথভাবে বিক্ষোভ দেখাবে। কংগ্রেস চাইছে, বাইরে বিক্ষোভ চললেও সংসদের ভিতরে অপারেশন সিঁদুর-ই থাকুক মূল অভিমুখে।
অন্যদিকে, পাল্টা রাজনৈতিক কৌশলে নামছে এনডিএ জোটও। তারাও সংসদ ভবনের বাইরে পাল্টা বিক্ষোভে অংশ নেবে বলে সূত্রের খবর।
মোদীর উপস্থিতি এবং তৃণমূলের সম্ভাব্য স্ট্যান্ড
সোমবারের এই গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। তবে তিনি আলোচনা চলাকালীন বক্তব্য রাখবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সূত্র বলছে, অপারেশন সিঁদুর যেহেতু মোদীর কৌশলগত চিন্তার ফলাফল, তাই আলোচনার শেষে তাঁর বক্তব্য আসতে পারে।
অপরদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও সংসদে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সূত্রের দাবি, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন এবং বাংলার প্রসঙ্গ টেনেই বক্তৃতা রাখতে পারেন লোকসভায়।
বিভাজনের সুযোগ কি কাজে লাগাবে সরকার?
অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে সরকার বিরোধীদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইছে—বিশেষ করে কংগ্রেসকে নিশানা করে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবিরের মধ্যে ইস্যু বিভাজন ও কৌশলগত অসঙ্গতি থাকলে বিজেপি তা তৎপরভাবে ব্যবহার করতেই পারে।
এখন দেখার, ইন্ডিয়া ব্লক ঐক্য রক্ষা করে মোদী সরকারকে চাপে ফেলতে পারে কিনা, নাকি তৃণমূল-আরজেডির মতো শরিকদের আলাদা অবস্থান সংসদে সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দেবে।
এদিনের আলোচনাই সম্ভবত স্থির করবে, ২০২৯-এর পথে জাতীয় নিরাপত্তা বনাম রাজনৈতিক বিভাজনের কোন রূপরেখা গঠন নেবে ভারতের সংসদীয় রাজনীতি।