উৎপাদন শিল্পের উন্নতিতে রেকর্ড গড়ল ভারত

২০২৫ সালের জুলাই মাসে ভারতের উৎপাদন শিল্পে (India Manufacturing) একটি অভূতপূর্ব সাফল্যের সূচনা হয়েছে। HSBCএর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (PMI) জুলাই মাসে…

India Manufacturing Sector Sets Record High with PMI at 59.2 in July 2025

২০২৫ সালের জুলাই মাসে ভারতের উৎপাদন শিল্পে (India Manufacturing) একটি অভূতপূর্ব সাফল্যের সূচনা হয়েছে। HSBCএর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (PMI) জুলাই মাসে ৫৯.২ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে, যা জুন মাসের ৫৮.৪ পয়েন্ট থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই সূচক প্রায় ১৭ দশকের (১৭.৫ বছর) সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, যা ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এর পরে প্রথম। এই রেকর্ড উন্নতি ভারতের অর্থনৈতিক জীবনীশক্তি ও বিশ্বমঞ্চে উৎপাদন ক্ষেত্রে তার প্রভাব বাড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।

উৎপাদন শিল্পের এই বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চাহিদার বৃদ্ধি উৎপাদন ক্ষমতাকে উৎসাহিত করেছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগ ও উৎপাদন-সম্পর্কিত উৎসাহ প্রদান (PLI) পরিকল্পনা ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর (MSMEs) জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে। বিশেষ করে অটো কম্পোনেন্ট, প্রকৌশল পণ্য এবং বস্ত্রশিল্পের মতো খাতে এই ছোট উদ্যোগগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তৃতীয়ত, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলা (সাপ্লাই চেইন) থেকে চীনের একনায়কত্ব কমে ভারতের দিকে আকর্ষণ বাড়ছে, যা “চায়না প্লাস ওয়ান” কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

   

সরকারি উদ্যোগ ও অবকাঠামোর ভূমিকা
ভারত সরকারের “মেক ইন ইন্ডিয়া” প্রচেষ্টা ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল দেশকে একটি বিশ্বস্ত উৎপাদন ও নকশা কেন্দ্রে রূপান্তর করা। এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র স্থানীয় উৎপাদনকে বাড়াতে সাহায্য করেনি, বরং বিদেশি সরকারি বিনিয়োগ (FDI) আকর্ষণেও সফল হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের জাতীয় জন্যপত্র (GDP) বৃদ্ধি ৮.১৫% হওয়ার পেছনে উৎপাদন খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন ডেলি-নাগপুর ও বারাণসী-মুম্বই উদ্যোগ করিডর, শিল্প কেন্দ্রগুলোর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করেছে।

ভোপালের মতো শহরগুলো এখন উদ্যোগ বিনিয়োগের একটি কেন্দ্র হিসেবে উত্থান করছে। ভোপালের কেন্দ্রীয় অবস্থান, দক্ষ শ্রমশক্তি এবং সরকারি নীতিগত সমর্থন এই শহরকে ভারতের শিল্পীয় ভবিষ্যতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে।

ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের অবদান
MSMEs ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রে একটি মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে। এই খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, স্থানীয় উৎসে নির্ভরশীলতা এবং বিভিন্ন বাজারে বিস্তারের মাধ্যমে তারা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে। তবে, এই উন্নতিকে স্থায়ী করতে গভীর ক্রেডিট সুযোগ, ক্লাস্টার-ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন এবং সহজ নিয়মনীতি প্রয়োজন। জার্নাল অফ ইকোনমিক পার্সপেকটিভস (২০২৩) এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, PMI যখন ৫০-এর উপরে থাকে, তখন তা অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়, তবে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য অবকাঠামোর উন্নতি অপরিহার্য।

Advertisements

বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা
বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলায় ভারতের ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে। চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিভিন্ন দেশ ভারতকে একটি বিকল্প হিসেবে দেখছে। ইউকে-ভারত এবং ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষাত্কারের প্রক্রিয়া এই দিকে এগোচ্ছে, যা ভবিষ্যতে উৎপাদন ক্ষেত্রে আরও বৃদ্ধি আনতে পারে। CSIS (২০২৪) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের ভৌগোলিক সুবিধা ও সরকারি সহায়তা তাকে বিশ্ববাজারে একটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
যদিও এই উন্নতি উৎসাহজনক, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্রেডিট সুযোগের অভাব, শিল্প কেন্দ্রে দক্ষ শ্রমিকের সংকট এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা এখনও একটি বড় পড়া। তবে, সরকার এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় এই বাধাগুলোর সমাধান সম্ভব।

ভারতের উৎপাদন শিল্পের এই রেকর্ড উন্নতি একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছে। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রতীক নয়, বরং দেশের যুবশক্তি, প্রযুক্তি ও সরকারি নীতির সফল সমন্বয়ের ফলাফল। ভবিষ্যতে ভারত যদি অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগে গতি বজায় রাখতে পারে, তবে এই উন্নতি একটি স্থায়ী কাহিনীতে রূপ নিতে পারে। জাতীয় উৎপাদন শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার এই পথে ভারত বিশ্বের সম্মুখে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারে।