ধনখড়ের পদত্যাগ নিয়ে বিস্ফোরক মল্লিকার্জুন খড়গে

উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের অপ্রত্যাশিত পদত্যাগ (Kharge) ভারতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা…

Kharge statement on dhankhar

উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের অপ্রত্যাশিত পদত্যাগ (Kharge) ভারতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে, এই পদত্যাগ নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেছেন “আমি কিছুই জানি না, কারণ তিনি সবসময় সরকারের পক্ষে ছিলেন। তাঁকে বলতে হবে কী হয়েছে, কারণ তিনি কখনোই আমাদের কৃষক, গরিব এবং বিদেশ নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে দেননি। আমরা যখন গরিব, মহিলাদের উপর অত্যাচার, দলিতদের উপর অত্যাচার এবং হিন্দু-মুসলিম বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছি, তখন তিনি আমাদের নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও কখনোই আলোচনার অনুমতি দেননি।

   

কী হয়েছে এবং কেন তিনি পদত্যাগ করলেন, তা তাঁর এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর মধ্যে। তাঁদেরই বলতে হবে।” খড়গের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এবং তিনি দাবি করেছেন যে এই পদত্যাগের পিছনে ‘দাল মে কুছ কালা হ্যায়’ অর্থাৎ কিছু গোপন রহস্য রয়েছে।

ধনখড়ের পদত্যাগের পটভূমি

জগদীপ ধনখড়, যিনি ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ভারতের ১৪তম উপরাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা সোমবার রাত ৯:২৫-এ তাঁর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত হয়। তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রে বলেন, “স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আমি অবিলম্বে উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করছি।”

তবে, তাঁর এই স্বাস্থ্যগত কারণের দাবি রাজনৈতিক মহলে খুব কমই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ধনখড় সোমবার সকালে রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনা করেছিলেন এবং ব্যবসায়িক উপদেষ্টা কমিটির (বিএসি) বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।

এমনকি তিনি দুপুর ১২:৩০-এ বিএসি-র বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন এবং বিকেল ৪:৩০-এ আরেকটি বৈঠকের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সূত্র জানায়, তিনি সন্ধ্যা ৭:৩০ পর্যন্ত কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন এবং তখনও পদত্যাগের কোনো ইঙ্গিত দেননি।

খড়গের অভিযোগ ও রাজনৈতিক বিতর্ক

মল্লিকার্জুন খড়গে তাঁর মন্তব্যে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ধনখড়ের পদত্যাগের পিছনে স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়াও অন্য কিছু রয়েছে। তিনি বলেন, “তিনি বিজেপি এবং আরএসএস-কে তাঁদের নিজেদের লোকের চেয়েও বেশি সমর্থন করতেন। তিনি সবসময় সরকারের পক্ষে ছিলেন। তবু তাঁকে পদত্যাগ করতে হল।

সরকারকে বলতে হবে কেন তিনি পদত্যাগ করলেন, এর পিছনে কী কারণ রয়েছে।” খড়গের এই বক্তব্যে তিনি ধনখড়ের রাজ্যসভা পরিচালনার পক্ষপাতমূলক ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে ধনখড় বিরোধীদের কৃষক, গরিব, দলিত, মহিলাদের উপর অত্যাচার এবং ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনার সুযোগ দেননি, এমনকি নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও।

Advertisements

ধনখড়ের পদত্যাগের দিন রাজ্যসভায় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। বিরোধী দলের ৬৮ জন সাংসদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন, যিনি তাঁর বাসভবনে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের ঘটনায় শিরোনামে এসেছিলেন। ধনখড় এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন, যা সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যায় বলে মনে করা হয়।

সূত্র জানায়, সরকার এই অভিশংসন প্রস্তাব লোকসভায় আনতে চেয়েছিল, কিন্তু ধনখড়ের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত সরকারের অসন্তোষের কারণ হয়। এছাড়া, বিকেল ৪:৩০-এ বিএসি-র বৈঠকে বিজেপি নেতা জেপি নড়্ডা এবং সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর অনুপস্থিতি ধনখড়কে ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত করেছে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এই পদত্যাগকে ‘অভূতপূর্ব’ এবং ‘রহস্যে মোড়া’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “ধনখড়ের পদত্যাগ তাঁর সম্মান বাড়ায়, কিন্তু যাঁরা তাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা দেয়।”

এদিকে, বিজেপি নেতা জেপি নড়্ডা এই অভিযোগ খারিজ করে বলেছেন, তাঁর মন্তব্য বিরোধী সাংসদদের উদ্দেশে ছিল, চেয়ারের প্রতি নয়। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ধনখড়ের বিচারব্যবস্থার সমালোচনা এবং তাঁর স্বাধীন মনোভাব সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে।

জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ ভারতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা স্বাস্থ্যগত কারণের বাইরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। মল্লিকার্জুন খড়গের মন্তব্য এই পদত্যাগের পিছনে গভীর রহস্যের দিকে ইঙ্গিত করে। তিনি সরকারের কাছে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন, যাতে জনগণ জানতে পারে এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের প্রকৃত কারণ।

বড় ব্যাটারি ও ওয়াটারপ্রুফ বডি সহ আসছে Oppo Reno 14FS 5G, জানুন সম্ভাব্য ফিচার ও দাম

রাজ্যসভায় ধনখড়ের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা এবং সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি এই ঘটনার পটভূমি তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী আগস্টের শেষ সপ্তাহের মধ্যে নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক ও জল্পনার জন্ম দিয়েছে, এবং আগামী দিনে এর প্রভাব কী হবে, তা দেখার বিষয়।