টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়র পরীক্ষা ঘিরে ক্ষোভ তৃণমূল নেতৃত্বের

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন অর্থাৎ ২৮ জুলাই স্নাতক পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ…

TMCP exam

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন অর্থাৎ ২৮ জুলাই স্নাতক পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে টিএমসিপি। বিশ্ববিদ্যালয় এই দিনে বিএ এলএলবি সেমেস্টার ৪ এবং বি কম সেমেস্টার ৪-এর পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে, যা দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারিত।

টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এই সিদ্ধান্তকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই সময়সূচি ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দেওয়ার একটি রাজনৈতিক কৌশল।

   

তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বও এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাত থাকার অভিযোগ তুলেছে, যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজ্য-পরিচালিত প্রতিষ্ঠান, এবং এর দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।

টিএমসিপির অভিযোগ ও প্রতিবাদ

টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছেন, “২৮ অগস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ বি কম সেমেস্টার ৪ এবং বিএ এলএলবি সেমেস্টার ৪-এর পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে, এবং সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

এটি কোনো সাধারণ একাডেমিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি স্পষ্ট যে, এটি দিল্লির নির্দেশে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দেওয়ার একটি রাজনৈতিক কৌশল।” তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত শুধু টিএমসিপি-র সমর্থক ছাত্রদের নয়, সাধারণ ছাত্রদেরও চরম অসুবিধায় ফেলবে, কারণ এই দিনে মায়ো রোডে প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে বিপুল জনসমাগমের কারণে যাতায়াতে সমস্যা হবে।

টিএমসিপি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্তর কাছে একটি চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই দিনে পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত শুধু অসম্মানজনক নয়, বরং টিএমসিপি-র সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের অনুভূতিকে ক্ষুণ্ন করার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। আমরা এই পরীক্ষার সময়সূচি অবিলম্বে পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি।” টিএমসিপি দাবি করেছে যে, উপাচার্য তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা ‘অগণতান্ত্রিক’ এবং ‘নিন্দনীয়’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “পরীক্ষার সময়সূচি অনেক আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল সরকারি ছুটির দিনে পরীক্ষা বন্ধ রাখে।

প্রতিটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের তারিখ মাথায় রেখে পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, পরীক্ষার সময়সূচি শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়, এবং এতে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।

Advertisements

বিরোধীদের সমালোচনাসিপিআই(এম)-এর ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই) টিএমসিপি-র এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে। এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি দেবাঞ্জন দে বলেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস যখন তাদের শহিদ দিবসের সমাবেশ সোমবার আয়োজন করেছিল, তখন বেশ কয়েকটি স্কুলকে পরীক্ষা বাতিল করে ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছিল।

তখন কি টিএমসিপি তাদের দলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল? তারা এমনভাবে আচরণ করছে যেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, এবং তাদের নেতারা ঠিক করবেন কখন পরীক্ষা হবে। এই দ্বৈত মান বন্ধ করা উচিত।”

টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসের তাৎপর্য

প্রতি বছর ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করে। এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্র নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন।

মায়ো রোডে আয়োজিত এই সমাবেশে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ছাত্র অংশ নেয়। এই অনুষ্ঠান টিএমসিপি-র জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ছাত্রদের মধ্যে দলীয় আদর্শ ও নেতৃত্বের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি মাধ্যম। তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত আজকের ছাত্র ও যুব সমাজকে থামানোর জন্য একটি গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।”

টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সূচি ঘিরে উত্তেজনা রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিয়েছে। টিএমসিপি এই সিদ্ধান্তকে ছাত্রদের অধিকারে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে, যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটিকে একটি নিয়মিত একাডেমিক সিদ্ধান্ত বলে দাবি করছে। বিরোধী দলগুলি টিএমসিপি-র এই প্রতিবাদকে ‘দ্বৈত মান’ হিসেবে সমালোচনা করেছে।

নর্দমার জলে মিলল গোছা গোছা ভোটার কার্ড, প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন

এই ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব এবং ছাত্রদের অধিকারের প্রশ্নকে নতুন করে সামনে এনেছে। পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের দাবিতে টিএমসিপি-র পক্ষ থেকে আরও প্রতিবাদ বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, যা আগামী দিনে এই বিতর্কের গতিপথ নির্ধারণ করবে।