999 Vs 995 Gold: ভারতে সোনার প্রতি আকর্ষণ কেবল ঐতিহ্যগত বা সাংস্কৃতিক নয়, এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবেও পরিচিত। উৎসব, বিয়ে বা জীবনের বড় বড় ঘটনাগুলিতে সোনা কেনার রীতি বহু পুরোনো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও দেশে বাড়তি চাহিদার কারণে সোনার দাম দ্রুত বেড়ে চলেছে। এর ফলে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতার পক্ষে সোনার গহনা কেনা কঠিন হয়ে উঠছে।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারিতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম যেখানে প্রতি গ্রাম ছিল প্রায় ৭,৮০০ টাকা, সেখানে জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০,০০০ টাকা প্রতি গ্রাম। এমন ঊর্ধ্বগতির ফলে অনেকেই হালকা ওজনের ও কম ক্যারেটের গহনার দিকে ঝুঁকছেন।
কেন বিশুদ্ধতা যাচাই জরুরি?
বাজারে বিভিন্ন ক্যারেটের সোনা পাওয়া যায় — ২৪, ২২, ১৮, এমনকি ১৪ ক্যারেট। এই ক্যারেট মানে হলো, সোনার সঙ্গে কত শতাংশ অন্যান্য ধাতু মিশ্রিত হয়েছে। শুদ্ধ সোনা মানে ২৪ ক্যারেট, যার বিশুদ্ধতা ৯৯.৯ শতাংশ, অর্থাৎ ৯৯৯ গঠন। ২২ ক্যারেট সোনার বিশুদ্ধতা ৯১.৬ শতাংশ, যার মানে ২২ ক্যারেট সোনায় ৮.৪ শতাংশ অন্যান্য ধাতু থাকে।
বিশ্ব সোনা পরিষদের (World Gold Council) তথ্য অনুযায়ী, সোনার বিশুদ্ধতা দুইভাবে নির্ধারণ করা হয়— ক্যারেট এবং ফাইননেস (fineness)। ক্যারেট বলে দেয় সোনার সঙ্গে কত পরিমাণ ধাতু মিশেছে আর ফাইননেস বোঝায় প্রতি হাজারে কত অংশ খাঁটি সোনা আছে। যেমন, ২৪ ক্যারেট সোনার ফাইননেস ১.০০০ (২৪ ÷ ২৪) আর ২২ ক্যারেটের ফাইননেস ০.৯১৬ (২২ ÷ ২৪)।
৯৯৯ বনাম ৯৯৫ সোনা: কী পার্থক্য?
৯৯৯ সোনা বলতে বোঝায় ৯৯.৯ শতাংশ খাঁটি সোনা, যা সাধারণত ২৪ ক্যারেট হিসেবেই পরিচিত। এটি মূলত কয়েন ও সোনার বার আকারে বিক্রি হয়। এতে মাত্র ০.১ শতাংশ পরিমাণে সামান্য অশুদ্ধতা থাকে।
অন্যদিকে, ৯৯৫ সোনাও ২৪ ক্যারেট হলেও এতে ৫ গ্রাম পর্যন্ত অন্যান্য ধাতু থাকে প্রতি ১০০০ গ্রামে। এই ধরনের সোনা সাধারণত ট্রেডিং বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। বিনিয়োগকারী বা সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ৯৯৯ সোনা বেশি জনপ্রিয়।
কীভাবে বুঝবেন সোনা আসল কিনা?
সরকারি সংস্থা বিওরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (BIS) ২০০০ সালে হলমার্কিং স্কিম চালু করেছিল, যাতে সাধারণ মানুষ ঠকবেন না এবং আসল সোনা কিনতে পারেন। ২০২৩ সালে এই স্কিম আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন সোনার গহনা বিক্রির সময় ছয়-অক্ষরের ইউনিক HUID (Hallmark Unique Identification Number) থাকা বাধ্যতামূলক।
এই নম্বরটি দেখে আপনি BIS-এর BIS CARE অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে জানতে পারবেন সেই গহনার বিশুদ্ধতা, প্রস্তুতকারকের নাম এবং অন্যান্য বিবরণ। এর ফলে ক্রেতারা অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকছেন।
গহনা নয়, তাহলে কয়েন ও বার কীভাবে যাচাই করবেন?
যদিও HUID বর্তমানে গহনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক, কিন্তু সোনার কয়েন ও বার-এর ক্ষেত্রে এটি এখনও বাধ্যতামূলক নয়। তবে এগুলিতেও BIS লোগো এবং বিশুদ্ধতা উল্লেখ (যেমন ৯৯৯ বা ৯৯৫) করা থাকে। সেখান থেকেই একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব।
ঘরোয়া কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমেও সোনা খাঁটি কিনা তা যাচাই করা যায়। যেমন:
ভিনেগার টেস্ট: সোনার উপর ভিনেগার দিলে যদি রঙ বদলে যায়, বুঝবেন তাতে অশুদ্ধতা রয়েছে।
ম্যাগনেট টেস্ট: আসল সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না। যদি সোনার কয়েন বা বার চুম্বকে আটকে যায়, তাহলে বুঝতে হবে তাতে অন্য ধাতু মিশ্রিত আছে।
করণীয় কী?
১. গহনা কেনার সময় সব সময় HUID নম্বর চেক করুন।
২. BIS লোগো ও বিশুদ্ধতার স্ট্যাম্প খতিয়ে দেখুন।
৩. BIS CARE অ্যাপ ব্যবহার করে নম্বর যাচাই করুন।
৪. ৯৯৯ ও ৯৯৫ সোনার পার্থক্য বোঝার পর, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সোনার দাম যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে প্রতারণার সম্ভাবনাও। তাই কেবল দাম নয়, বরং সোনার বিশুদ্ধতাও এখন ক্রেতাদের কাছে বড় বিবেচ্য বিষয়। সঠিক তথ্য, সরকারি অ্যাপ এবং যাচাইকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি যেমন আপনার সঞ্চয় রক্ষা করতে পারবেন, তেমনই নিশ্চিত হতে পারবেন আপনি যা কিনছেন তা আসল ও খাঁটি।