ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে ৯৯% পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, বললেন পীযূষ গয়াল

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গয়াল শনিবার একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে সদ্য স্বাক্ষরিত ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (India UK FTA) ‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘ভারতের সবচেয়ে বিস্তৃত’…

Piyush Goyal Launches Startup India Desk

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গয়াল শনিবার একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে সদ্য স্বাক্ষরিত ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (India UK FTA) ‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘ভারতের সবচেয়ে বিস্তৃত’ বাণিজ্যিক চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন। দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই চুক্তি ভারতের কৃষক, মৎস্যজীবী, তরুণ পেশাজীবী, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) এবং ব্যবসায়ী মহলের জন্য অগাধ সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।”
মন্ত্রী জানান, ভারতের মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যে এই চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং এখন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই এটি কার্যকর হবে।

দীর্ঘ আলোচনার পর সফল চুক্তি:
এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম Comprehensive Economic and Trade Agreement (CETA)। পীযূষ গয়াল জানান, “ভারত ও ব্রিটেন প্রায় ২২-২৩ বছর ধরে আলোচনা চালিয়ে অবশেষে একটি ‘উইন-উইন’ চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে।”
এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পীযূষ গয়াল এবং ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস।

   

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের উপর যুক্তরাজ্যে শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হবে। এতে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, হস্তশিল্প, গয়না, ওষুধ, কৃষিপণ্য ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ভারতের রপ্তানি বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি আনবে বলে আশাবাদী কেন্দ্রীয় সরকার।

কৃষিখাতের কিছু পণ্য রক্ষা:
তবে চুক্তিতে ভারতের পক্ষ থেকে কিছু সংবেদনশীল কৃষিপণ্য যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, আপেল এবং চিজকে শুল্ক ছাড় থেকে বাদ রাখা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের কৃষক ও গৃহস্থ উৎপাদকদের সুরক্ষার দিকটি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য সম্প্রসারণে জোর:
চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে পীযূষ গয়াল বলেন, “এই চুক্তি কেবল দুটি দেশের মধ্যে নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে। ভারত এখন একটি আত্মবিশ্বাসী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান মজবুত করছে।” তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পেরু, চিলে এবং ওমানসহ একাধিক দেশের সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা সঠিক পথে এগোচ্ছে।

“আমরা কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে নেই,” গয়াল বলেন, “আমাদের প্রতিটি চুক্তি দু’পক্ষের স্বার্থ রক্ষার ভিত্তিতে সম্পন্ন হচ্ছে এবং আমাদের দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা সর্বাগ্রে রাখা হচ্ছে।”

Advertisements

পূর্বতন সরকারের চুক্তির সমালোচনা:
পীযূষ গয়াল এই সুযোগে পূর্বতন ইউপিএ সরকারেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “ইউপিএ সরকার এমন সব চুক্তি করেছিল যা ভারতের উৎপাদন ক্ষমতাকে বিপন্ন করেছিল, যেমন আসিয়ান (ASEAN) চুক্তি। ফলে আমাদের শিল্পক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিযোগিতার চাপ বেড়ে গিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমান মোদী সরকার এমন দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছে যারা ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না, বরং পারস্পরিক সম্পূরক। তিনি উদাহরণ হিসেবে মরিশাস, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থা (EFTA) এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির কথা উল্লেখ করেন।

MSME ও তরুণ প্রজন্মের জন্য সুযোগ:
মন্ত্রী বিশেষভাবে MSME খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতের হাজার হাজার ছোট উদ্যোক্তা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে। এটি আমাদের স্টার্টআপ ও উদীয়মান ব্যবসাগুলোর জন্য বড় আশীর্বাদ।”

তরুণ পেশাজীবীদের জন্য চুক্তির সুযোগ প্রসঙ্গে গয়াল বলেন, “প্রযুক্তি, পরিষেবা এবং শিক্ষার মতো খাতে কাজ করা ভারতীয় তরুণরা এখন আরও সহজে যুক্তরাজ্যে কাজ ও পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে।”

ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি কেবল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মজবুত করবে না, বরং ভারতের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতাকেও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। পীযূষ গয়ালের ভাষ্যে, “এটি শুধুই একটি চুক্তি নয়, বরং ভারতের আত্মনির্ভরতার দিশা।”