কুমড়ো চাষে লাভের সম্ভাবনা, জানুন সঠিক পদ্ধতি ও বাজারদর

কম খরচে বেশি লাভের সম্ভাবনা থাকলে সেটি হল কুমড়ো চাষ (Pumpkin Farming Guide)। বাংলার বহু কৃষক বর্তমানে ধান বা আলুর পাশাপাশি কুমড়ো চাষ করে অতিরিক্ত…

কুমড়ো চাষে লাভের সম্ভাবনা, জানুন সঠিক পদ্ধতি ও বাজারদর

কম খরচে বেশি লাভের সম্ভাবনা থাকলে সেটি হল কুমড়ো চাষ (Pumpkin Farming Guide)। বাংলার বহু কৃষক বর্তমানে ধান বা আলুর পাশাপাশি কুমড়ো চাষ করে অতিরিক্ত আয় করছেন। কারণ কুমড়ো এমন একটি সবজি যা সারা বছর বাজারে চাহিদাসম্পন্ন। শুধু রান্নার জন্য নয়, কুমড়ো দিয়ে মিষ্টি, পায়েস, এমনকি আচার পর্যন্ত তৈরি হয়। এই সব কিছুর জন্য কুমড়োর বাজারদর বেশ স্থিতিশীল।

কুমড়ো চাষের উপযুক্ত সময় ও জলবায়ু:
কুমড়ো মূলত গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ুতে ভাল জন্মায়। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এর বীজ বপন করলে এপ্রিল-মে নাগাদ ফসল তোলা যায়। আবার বর্ষাকালের শুরুতে (জুলাই-আগস্ট) বপন করলে অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ ফসল আসে। তবে ভালো রোদ, মাঝারি বৃষ্টি ও সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

   

মাটি ও জমি প্রস্তুতি:
সুযোগ থাকলে বেলে-দোআঁশ মাটি কুমড়ো চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। জমি ভালো করে চাষ করে জৈব সার (গোবর সার / ভার্মি কম্পোস্ট) মিশিয়ে নিতে হবে। প্রতি শতকে প্রায় ১৫-২০ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।

বীজ বপন ও পরিচর্যা:
কুমড়োর বীজ আগে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। প্রতি গর্তে ২–৩টি বীজ বপন করে দিতে হয় ১.৫-২ ফুট দূরত্বে। বীজ অঙ্কুরোদগমের পরে প্রতি গর্তে ১টি সুস্থ চারা রেখে বাকি গুলি তুলে দিতে হবে।
নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, জল সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে গাছের যত্ন নিতে হয়।

ফলন ও উৎপাদন:
সঠিক পরিচর্যা থাকলে প্রতি গাছে গড়ে ৩–৫টি কুমড়ো ফলতে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫০০–৬০০ কেজি পর্যন্ত কুমড়ো পাওয়া যায়। বাজারে এক কেজি কুমড়োর গড় দাম ১৫–২৫ টাকা থাকলে প্রতি বিঘা জমিতে ৮,০০০–১২,০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে।

লাভের হিসাব:
খরচ (১ বিঘা জমিতে):
বীজ – ₹৫০০
সার ও কীটনাশক – ₹২০০০
শ্রম ও অন্যান্য – ₹২০০০
মোট খরচ: ₹৪৫০০

Advertisements

আয় (গড় উৎপাদন ৫০০ কেজি, গড় দাম ₹২০): ₹১০,০০০

নেট লাভ: ₹৫,৫০০–₹৭,৫০০

বাজার ও বিপণন:
স্থানীয় হাটে কিংবা পাইকারি বাজারে কুমড়োর চাহিদা বরাবরই ভালো। অনেকে আবার কলকাতার বড় বাজার যেমন ক্যানিং, বাবু বাজার বা বারাসাতে সরবরাহ করে থাকেন। চাইলে কুমড়ো সংরক্ষণ করে কিছুটা দেরিতে বিক্রি করেও বেশি লাভ করা যায়।

কম পরিশ্রমে ও অপেক্ষাকৃত কম খরচে কুমড়ো চাষ বর্তমানে কৃষকদের কাছে লাভজনক একটি বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি সঠিক সময়ে সঠিক প্রযুক্তি ও যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে কুমড়ো চাষ থেকে বছরে ২ বার ফলন তুলে কৃষকরা নিশ্চিতভাবেই বাড়তি আয়ের মুখ দেখতে পারেন। কৃষি অফিস বা স্থানীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে কুমড়ো চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিলে ফলন আরও ভালো হতে পারে। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।