কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবারও নতুন করে উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে এনআরসি নোটিশকে (NRC notices) কেন্দ্র করে। দিনহাটা ও মাথাভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে সম্প্রতি অসম সরকারের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে পাঠানো হয়েছে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নোটিশ। এর জেরে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রবল আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা। ঠিক এই পরিস্থিতিতে শনিবার লতাপোতা এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক।
তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “অসম সরকার এই ধরনের নোটিশ পাঠিয়ে বাঙালিদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।” অভিজিৎ বাবুর সঙ্গে এদিন উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন, জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব এবং বহু তৃণমূল কর্মী। তাঁরা যান মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের লতাপোতা গ্রামে, যেখানে এনআরসি নোটিশ পাওয়া ব্যক্তি নিশিকান্ত দাসের সঙ্গে দেখা করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, বাংলার মাটিতে কোনও নাগরিকের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। এনআরসি বাংলায় কোনওদিন চালু হতে দেওয়া হবে না। আমরা জনগণের স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যাব।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পরিবার এমন নোটিশ পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাঁদের আশঙ্কা, আগামী দিনে আরও বহু পরিবারকে এই ধরনের নোটিশ পাঠানো হতে পারে। আতঙ্কে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে উদ্বেগ। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূল নেতৃত্বের এই আশ্বাস সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে সাহস জুগিয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবে নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত। একুশে নির্বাচনের আগে বিজেপি যে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছিল, তারই ধারাবাহিকতা হিসেবে এই এনআরসি-ভীতির পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছে শাসকদল।
অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, “আমরা কোনওভাবে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সফল হতে দেব না। এই বাংলায় ধর্ম, জাতি বা ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন চলবে না। মানুষের স্বার্থে গণআন্দোলনের মাধ্যমেই এই ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে।”
এই বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও ভরসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যদি কেউ এমন নোটিশ পান, তাহলে দলীয় স্তরে আইনগত সহায়তা এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের জন্য সর্বতোভাবে পাশে থাকবে দল।
এনআরসি ইস্যুতে ফের উত্তাল উত্তরবঙ্গের কোচবিহার। তবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব যে স্পষ্ট বার্তা দিলেন, তাতে দলের রাজনৈতিক অবস্থান যেমন আরও সুদৃঢ় হল, তেমনই আতঙ্কের আবহে মানুষের মনে তৈরি হল নতুন করে আশার আলো।