বর্তমানে কৃষিতে অনেক চাষি বিভিন্ন কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের (Ginger) কাছে কৃষি অনেক সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ, অল্প লাভজনক এবং পরিশ্রমী মনে হয়। তবে, আদা চাষের মতো সহজ ও লাভজনক বিকল্প চাষি কৃষকদের আবার কৃষির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারে। বিশেষত, শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে যেখানে কৃষি জমির অভাব রয়েছে, সেখানে বস্তায় আদা চাষ শুরু করে চাষিরা সহজেই নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটি এমন এক চাষ পদ্ধতি, যা খুব কম পুঁজি এবং জায়গা নিয়েই কার্যকরভাবে করা যায়।(Ginger)
মেঘালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামোন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈকত মজুমদার লিখেছেন, “বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে চাষিরা নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারেন, এবং এটি তাদের কৃষি সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।” শুধু গ্রামে নয়, শহরের ছাদ বা বাড়ির ফাঁকা জায়গায়ও সহজেই আদা চাষ করা সম্ভব।
আদার পুষ্টি ও উপকারিতা:
আদা একটি বহুবর্ষীয় ঘাস জাতীয়(Ginger) উদ্ভিদ, যার মূল (রাইজোম) মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আদা মূলত খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণাগুণের জন্য এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আদা জ্বর, সর্দি, কাশি, বদহজমসহ আরও নানা ধরনের রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, ওড়িশা, কর্ণাটক, অরুণাচল প্রদেশ, গুজরাট ইত্যাদি রাজ্যে আদা চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে, যা দেশে আদা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।(Ginger)
বস্তায় আদা চাষের উপকারিতা:
১. কম জায়গায় চাষ করা সম্ভব: বস্তায় আদা চাষের অন্যতম বড় সুবিধা হলো এটি ছোট জায়গায়ও করা যেতে পারে। বাড়ির ছাদ, বাগান কিংবা ফাঁকা জায়গায় আদা চাষ করা সম্ভব।(Ginger)
কম খরচে বেশি লাভ: আদা চাষের জন্য বড় জমির প্রয়োজন নেই, যা চাষিদের জন্য একটি বড় সুবিধা। এটি বিশেষত শহরাঞ্চলে যারা কৃষির সাথে যুক্ত হতে চান, তাদের জন্য একটি ভালো বিকল্প।
নতুন চাষিদের জন্য সহজ পদ্ধতি: কম ঝুঁকি এবং সহজ পদ্ধতির কারণে নতুন চাষিরা সহজেই বস্তায় আদা চাষ শুরু করতে পারেন। এটি তাদের কৃষিতে প্রবেশের একটি দরজা খুলে দেয়।(Ginger)
অল্প সময়েই ফলন: আদা চাষের ফলন খুব দ্রুত হয় এবং এতে ভালো মুনাফাও পাওয়া যায়।
বস্তায় আদা চাষের প্রক্রিয়া:
১. আদা চাষের উপযুক্ত সময়:
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আদা চাষ শুরু করা উপযুক্ত সময়। আদা উত্তোলন করার উপযুক্ত সময় ফাল্গুন-চৈত্র মাস।(Ginger)
২. বস্তায় আদা চাষের উপকরণ:
বস্তায় আদা চাষ করতে হলে কিছু উপকরণ প্রয়োজন হবে, যেগুলি খুব সহজে পাওয়া যায়:
বস্তা: সিমেন্টের বা অন্য কোনো বস্তা, যার ওজন হবে প্রায় ১৫ কেজি।
মাটি: ৭ কেজি মাটি প্রয়োজন হবে।
গোবর সার: ৪ কেজি।
কোকোপিট: ১ কেজি।
ছাই: ১.৫ কেজি।
ধানের তুষ: প্রয়োজনে দিতে হবে।
ফুরাডান: ১ কেজি।
রাসায়নিক সার: ১.৫ কেজি (যেমন ডিএপি ও এমওপি, ১০-১২ গ্রাম করে)।
বালি: ১ কেজি।
৩. আদা চাষের প্রস্তুতি:
উপরের উপকরণগুলো ভালভাবে মিশিয়ে বস্তায় রাখা হবে। বস্তায় মাটি, সার, কোকোপিট, ছাই, ধানের তুষ, রাসায়নিক সার, ফুরাডান এবং বালি মিশিয়ে প্রস্তুত করা যাবে। একে একটি আদা চাষের উপযুক্ত বস্তা বলা যেতে পারে।
৪. আদা বীজ রোপণ:
আদার বীজ রোপণের জন্য সঠিক ও স্বাস্থ্যবান রাইজোম বেছে নিতে হবে। বীজটি বস্তায় মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে রোপণ করুন এবং তারপর নিয়মিত জল সেচ দিন।
৫. আদা চাষের পরিচর্যা:
বস্তায় আদা চাষে নিয়মিত পানি দেওয়া, ছায়া প্রদান এবং মাঝে মাঝে সার প্রয়োগ করতে হবে। ৪-৬ মাস পর আদা প্রস্তুত হতে শুরু করবে।
৬. আদা উত্তোলন:
ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আদা উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত সময়। এই সময়ে আদা চাষ সম্পন্ন করা যায়।